মহান আল্লাহ তায়ালা ব্যবসাকে হালা করেছে ও সুদ কে হারাম করেছে। বিশ্বের যা কিছু চলতেছে সব স্টক ব্যবসা এর অধিনেই চলতেছে। স্টক ব্যবসা মানেই হলো স্টকলট ব্যবসা। বড় বড় কোম্পানী, গার্মেন্টস, কল কারখানা, কৃষি সহ সব কিছুই চলছে এই স্টক বিজনেস বা হালাল স্টক ব্যবসায়। এই স্টক ব্যবসা নিয়ে সারাজীবন লিখলেও শেষ হবে না। এখানে কৃষির উপর লিখেছি।
আজ আপনাদের ১০ টি ছোট পুজির স্টকলটের ব্যবসার ধারনা দিবো। যাহা আপনি অবলম্বন করে হাল পথে রুজি করতে পারেন। যেখানে ঝুকির পরিমান খুব একটা কম এবং কখনও ঝুকি চলে এলেও আপনি সামাল দিতে পারবেন। এমন কিছু নিয়ে আজকে পোস্ট। তবে আগে জানুন স্টকলট কি? স্টকলট হলো কোন জিনিসকে মজুদ করে রাখা আর লট হলো সেই বস্তুগুলো একত্র বা একসাথে রাখা। আবার মনে করেন না যে এটা ঢাকা চট্রগ্রামের স্টক এক্সচেন্স মার্কেট। কথা আর বাড়াব না চলুন শুরু করা যাক।
ধানের ব্যবসা
ধান চিনে না এমন কেউ নেই। বিশেষ করে এশিয়ায় ধানের চাহিদা প্রচুর। কারন ধান থেকে আমরা চাল পাই। আর চাল মানেই আমাদের দৈনিক ২ থেকে ৩ বেলার খাদ্য। আপনি ধানের স্টক ব্যবসা করতে পারেন। সিজন সময়ে আপনি ধান কিনে রাখতে পারেন। বেশ কিছুদিন পর আপনি ধান বিক্রি করে দিতে পারেন। এছাড়া আপনি ধানগুলো চাউলকল থেকে ভেঙ্গে নিয়ে এসে আপনি চাউল বিক্রি করতে পারেন। ধানের ব্যবসায় লাভ সীমিত হলেও আপনি লস এ কম পড়বেন। তাই ধানের ব্যবসা অনায়াসে করতে পারেন।
গমের ব্যবসা
গম একটি পরিচিত খাদ্য, সকাল বেলাই আমাদের বেশিরভাগ সময়ে নাস্তার জন্য গমের আটার প্রয়োজন হয়। আপনি গমের ব্যবসা করতে পারেন অনায়েসে। গম বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গায় হয়। তাই আপনি হাতের কাছে গমের সিজনে এসব পাবেন। আপনি যদি সিজন সময়ে কম টাকায় কম কিনে রাখেন তাহলে অফ সিজনে তা বিক্রি করলে ভাল মুনাফা অর্জন করতে পারবেন। গমের ব্যবসায় ঝুকি নেই বললেই চলে। আর এসব স্টক করে রাখলে আপনি দির্ঘ ১ বছর পর্যন্ত গোডাউনে রাখতে পারেন। কোন রকম ভয় ছাড়া ( চুরি ব্যতিত) থাকতে পারেন।
আলুর ব্যবসা
আলু হলো আমাদের দেশের দৈনন্দিন জীবনের খাদ্যের একটি অংশ। বাংলাদেশের কথা দিয়ে শুরু করলে বোঝা যায় শতকরা প্রায় ৯৯% মানুষ আলু খায়। যে একজন আলু খায় না আমি বলব সেই লোক মানুষের মাঝে পড়ে না। কারন আলু এমন একটি খাদ্য যেটি শরীরের চর্বি কমা সহ মানব দেহে অনেক প্রয়োজনীয় কাজ করে। আমি ডাক্তার না। ব্যবসার কথা বলি।
আপনি আলুর সিজনে আলু কিনে স্টক করে রাখতে পারেন। সেটি অবশ্যই হিমাগার এ রাখতে হবে। মাসিক ও ছয় মাসিক হিসেবে হিমাগার ভাড়া পাওয়া যায়। ওই হিমাগারে আলু রাখার জন্য আপনাকে বস্তাপ্রতি টাকা গুনতে হবে। আপনি যখন অন সিজনে আলু কিনবেন তখন অবশ্যই দাম কম থাকবে। কিন্তুু অফ সিজনে এসে আপনাকে চড়া দামে বিক্রি করতে ও ক্রয় করতে হবে। তাই আলুর চাহিদা যেহেতু বেশি আপনি আলুকে জাতীয় ব্যবসা হিসেবে ধরে নিতে পারেন। আলু পাবেন বিশেষ করে মুন্সিগঞ্জের চর এলাকায় এছাড়া বগুড়া ও রংপুরে আলুর ব্যাপক চাষ হয়। আর চাষ যেখানে বেশি হয় অবশ্যই অন সিজনে দামও একটু কম হয়।
ভূট্টার ব্যবসা
গম ও ধানের মতই ভূট্টার চাহিদা আছে দেশে। আপনি যদি একটু চিন্তা করে দেখেন আপনি কোন না কোন ভাবে দৈনিক একবার হলেও ভূট্টা খাচ্ছেন। অবশ্যই ডাইরেক্ট ভূট্টা না ভূট্টা থেকে ময়দা খাচ্ছেন। সেটা পরাটার মাধ্যমে হোক, সিঙ্গারার মাধ্যমে হোক অথবা বিস্কুটের মাধ্যে হোক খাচ্ছেন তো খাচ্ছেন। আর যেহেতু খাচ্ছেন তাই চাহিদা অবশ্যই বেশি হবেই। আপনি ভুট্টা কিনে স্টক করে রাখতে পারলে খুবেই লাভবান হবেন।
আর অবশ্যই ভূট্টার স্টকলটের ব্যবসা করলে আপনাকে ভূট্টা সমন্ধে ধারনা রাখতে হবে। কারন গুনতগমান যদি না চিনতে পারেন তাহলে ব্যবসায় লস করে বসবেন। তাই আপনাকে অবশ্যই সে সমন্ধে ধারনা রাখতে হবে। বাংলাদেশে লালমনিরহাট সহ উত্তর অঞ্চলের বেশিরভাগ জেলায় ভাল রকম ভূট্টা চাষ করা হয়। যদিও আপনাকে ভূট্টা সংগ্রহ করতে কষ্ট হবে। তবুও যদি করতে পারেন তাহলে ভাল লাভবান হবেন।
পিঁয়াজের ব্যবসা
পিঁয়াজের ব্যবসা আপনি অনায়েসে করতে পারেন। পিঁয়াজের স্টাকলটের ব্যবসা করতে আপনাকে সাধারন ও প্রাচিন সংস্কৃতি অবলম্বন করে তারপর এই ব্যবসায় নামতে হবে। কারন পিঁয়াজ এমন একটি পচঁনশীল খাদ্য যেটি অধিক গরম অধিক বৃষ্টি ও অধিক ঠান্ডা সহ্য করতে পারে না। তাই আপনি পিঁয়াজের স্টকলটের ব্যবসা করলে ভাল লাভবান হবেন ( যেমনটি ২০২০ সাল।
বাংলাদেশে প্রতিমন পিঁয়াজের দাম ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছিল) অনায়েসে। আবার যদি আপনি লস এ পড়েন তাহলে অনেক পূজি হারিয়ে ফেলবেন। তাই অবশ্যই আপনি এই ব্যবসা করলে সাধারন জ্ঞান জেনে রাখবেন। মনে রাখবেন (সম্মান পাওয়ার চাইতে রক্ষা করা কঠিন) এই সুত্রটি ধরে এই পিঁয়াজের ব্যবসা করতে পারেন। উত্তরবঙ্গে আপনি অন সিজনে মানে ( বৈশাখ মাসে) কম দামে ভাল মানের পিঁয়াজ পাবেন।
আর পিঁয়াজ স্টক করার জন্য আপনাকে পিঁয়াজের উৎপাদনকারী লোকদের সহায়তা নিলে ভাল হবে। কারন ওনাদের পিঁয়াজের সাথে সমপৃক্ততা অনেক ভাল। একটা কথা জেনে রাখা ভাল.. আপনি যদি ২০ মণ পিঁয়াজ সিজন সময়ে কিনে রাখেন তাহল ৫ থেকে ৬ মাস পর তাহা ১৬ মণ এ রুপান্তরিত হবে। এটা পিঁয়াজের নিয়ম ও খাদ্য কালচার। আপনি যে পন্থা অবলম্বন করুন না কেন কম হবেই।
বাদামের ব্যবসা
পার্কে বসে বাদাম খাচ্ছেন.? কি একবারেও ভেবেছেন যে আমি যেটা খাচ্ছি সেটা নিয়ে যদি ব্যবসা করি তাহলে কেমন হবে.! আসলে সত্যি তাই। বাদাম নিয়ে আপনি ব্যবসা করতে পারেন। আপনি ঝুকিহীন এই বাদামের ব্যবসা করতে পারেন। এর জন্য কোন রকম এক্সপেরিয়েন্স রাখতে হবে না। আপনি যদি সঠিক সময়ে বাদাম কিনে রাখতে পারেন তাহলে অবশ্যই ভাল হবে।
আর আপনি যদি অফ সিজনে বাদাম বিক্রি করেন তাহলে ডাবল লাভ হবে। বাদাম কেনার উপরক্ত সময় হলো আষাঢ় ও শ্রাবন মাসে আর বিক্রি করার মৌসুম হলো শীতকালে। আপনি উত্তরবঙ্গে সহ নদীবেষ্টিত অঞ্চলে বাদামের চাষ করা দেখতে পাবেন। আর সেখান থেকে বাদাম কিনে ভাল করে রোদ এ শুকিয়ে বস্তায় করে রাখতে পারেন। কোন রকম সমস্যা হবে না যদি বৃষ্টির পানিতে না ভিজে যায়। অবশ্যই ৬ মাসের চেয়ে বেশি সময় ধরে গোডাউনে রাখতে পারবেন। তবে ইঁদুর থেকে সাবধান।
তামাকের ব্যবসা
এটা ব্যবসা করা মোবাহ ( হালালও না হারাম ও না) আমি ব্যবসা করা মোবাহ এই জন্য বলেছি তার কারন হলো তামাক, জর্দা, গুল, সিগারেট এসব খাওয়া হাদীসের আলোকে মোবাহ। তাই আমিও তামাকের ব্যবসাকে মোবাহ বলেছি। যদিও আমি হুজুর না। তামা দিয়ে কি কি করা হয় সেটি অবশ্যই আপনি বুঝে গেছেন। তামাকের মার্কেট একটি বড় ধরনের মার্কেট দেশে।
তাই আপনি ইচ্ছাশক্তির বিরুদ্ধেও করতে পারেন। এই তামাক ব্যবসা এমন একটি ব্যবসা যেটি কৃষক উৎপাদন করলে ঝুকি ছাড়া উৎপাদন করতে পারে আবার যারা স্টক ব্যবসা করে তামাক নিয়ে তারাও ঝুকি ছাড়া এই ব্যবসা করতে পারে লস ছাড়া পুড়াটাই লাভ নিয়ে। তামাক দিয়ে তৈরি হয় বিড়ি, সিগিরেট, জর্দা, গুল সহ আরো অনেক কিছু। নেশা জাতীয় দ্রব্য হলেও বাংলাদেশে তামাক নিয়ে তেমন বড় কোন সরকারের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা আসেনি তাই এই তামাক ব্যবসা করতে পারেন। তামাকের ( পাংকু) বেশি চাষ হয় লালমনিরহাটে ও কুড়িগ্রামে।
আদা ও মশলার ব্যবসা
আগে একটা প্রবাদ ছিল “আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবর ” তার মানে হলো কোন ব্যক্তিকে ছোট করে দেখা। তবে এখন আর সেই দিন নেইরে ভাই.. আদার ব্যবসা করে লাখপতি হয়েছে এমন অনেক নজীর আছে। আর মশলা সমন্ধে নাই বললাম মাছ মাংস থেকে শুরু করে সব তরকারিতে মশলা লাগে। এমনকি এখন এমন কিছু দেখা যায় যে ঘরের বউয়েরা মাংসের দামের অর্ধেক দামের মশলা দিয়ে তরকারি রান্না করে।
তাহলে মশলার চাহিদা কেমন নিজের ঘরে দেখে মিলিয়ে নিতে পারেন। তবে একটা কথা মনে রাখবেন আদা বেশিদিন স্টক করে রাখতে পারবের না। তবে হলুদ সহ অন্য মসলা স্টক করে রাখতে পারবেন। কিন্তুু আপনার ক্রয় করতে অনেক সময় লাগবে। যেমন আদা কিনতে হবে উত্তরবঙ্গ থেকে আর জিরা কিনতে হবে দক্ষিণবঙ্গ থেকে, দারুচিনি কিনতে হবে পঞ্চিমবঙ্গ থেকে। ধনিয়া কিনতে হবে পূর্ববঙ্গ থেকে। এলাস কিনতে হবে ইন্ডিয়া থেকে। উপরক্ত ঝামেলাগুলো আপনাকে পোহাতে হবেই হবে। যদিও অনেক লাভজনক ব্যবসা তবুও ভেবে চিন্তে করবেন।
ডালের ব্যবসা
ডাল একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য। আপনাকে ডাল কিনতে হবেই হবে। বাংলাদেশে অনেক ধরনের ডাল রয়েছে। যেগুলো দামের উপর নির্ভর করে। আপনি ডাল স্টক করে রাখতে পারেন। আর এই ডালের কোন অন সিজন ও অফ সিজন হিসেবে কিনতে যাবেন না। প্রায় সারাবছর একরকম দামেই থাকে। আপনার বেশিরভাগ ভাগ্যের উপর নির্ভর করে এর লাভের কারন। তবুও কম্পিডিশন তেমন দেশে নেই তাই আপনি একরোখাভাবে এই ব্যবসা করে যেতে পারেন।
সুপারির ব্যবসা
বাঙালী সমাজের প্রথস সংস্কৃতি রয়েছে সুপারির সাথে। আমাদের ঘরে নতুন মেহমান আসলে সুপারি ও পান খেতে দেই। সুপারির ব্যবসা হলো লাভজনক ব্যবসার মধ্যে একটি। তবে এটি স্টক করে বিক্রি করতে পারবেন আপনাকে বামহাতে কিনে ডানহাতে বিক্রি করতে হবে তবুও ভাল লাভ করতে পাবেন। আর যদি স্টক করে রাখতে চান তাহলে সুপারি স্টক করার জন্য আপনাকে প্রাচীন পদ্ধতি অবলম্বন করে রাখতে হবে। সেটা হলো আপনাকে অন সিজনে সুপারি কিনে সেটি মাটির নিচে পুতে রাখতে হবে। সেখানে ৬ মাস রেখে( মজিয়ে) বের করতে হবে। গন্ধ হলেও বেশ খেতে। স্বাদ একদম ঠিক থাকে। আপনি সুপারির ব্যবসা করেও লাখপতি হতে পারেন।
উপরক্ত ব্যবসাগুলো আপনাকে একদম বসে থাকতে দিবে না। কারন মানুষের মাঝে দৈনিক চাহিদা রয়েছে। যেহেতু চাহিদা বেশি সেহেতু তার মার্কেটও অনেক বড়। আর মার্কেট বড় মানেই আপনি যদি এই ব্যবসা করেন তাহলে সব সময় দৌড়ের উপর থাকবেন। আর দৌড়ের উপর ও কাজের উপর থাকা মানেই আপনি লাভবান হবেন। তবে পরিশ্রমের অবর নাম লাভবান যদি এটা মানেন তাহলে নিজে পরিশ্রম করুন। আপনার পথের দুয়ার খুলে যাবে। আর একটি কথা হলো আপনি অবশ্যই এখানে ধারনা পেয়েছেন। আর এসব বিষয়ে যদি আপনি ব্যবসা করতে চান তাহলে কমেন্ট এ আপনার ঠিকানা সহ কোন ব্যবসাটি করতে চান তা লিখতে ভুলবেন না। এবং আপনার যদি কোন স্টক লট ব্যবসা সমন্ধে ধারনা থাকে সেটিও বলতে পারেন। আজ এ পর্যন্ত আল্লাহ হাফেজ।
তথ্যসূত্রঃ entreprenerzone