গ্রীষ্মকালীন বা দিবসনিরপেক্ষ শিমের জাতগুলোর মধ্যে অন্যত্তম একটি জাত হচ্ছে “অটো শিম”। অনেক কয় বছর ধরে এটি চাষ করে আসছি। আমার খুবই পছন্দের একটি জাত। তাই এই শিম সম্পর্কে কিছু না বললেই নয়। শিম শীতকালীন সবজি। আজ থেকে কয়েক বছর আগে শীতকাল ছাড়া শিমতো দুরের কথা, শিমের ফুল পর্যন্ত দেখা যেতো না।
তবে বর্তমানে কৃষি বিজ্ঞানীদের অবদানের ফলে অভাবনীয় অনেক কিছুই দেখা সম্ভব হচ্ছে। বর্ষা শেষ হওয়ার আগেই বাজারে সুন্দর, লকলকে, সবুজ শিমের আবির্ভাব। অসময়ে শিম দেখলে কার না খেতে ইচ্ছা করে? তবে দাম শুনেই কাম হয়ে যায়। চম্পট দিতে মন চায়। শীতকালে যে শিম ১০ টাকায় নেয়নি তার মূল্য নাকি আজ ১৪০ টাকা কেজী। তার পরও অল্প হলেওতো নিতেই হবে। যাই হোক, এটি আর অন্য কোন শিম নয়, এর নামই হচ্ছে ” অটো শিম”। নাম যেমন, কামও তেমন!
ফুল-ফলের জন্য এটি (শীতকালের) ছোট দিনের জন্য অপেক্ষা করে না, তাই একে দিবসনিরপেক্ষ জাত বলে।
গ্রীষ্মকালেও এটি দিব্যি ফল দিতে সক্ষম। তাই একে গ্রীষ্মকালীন শিম বলে।
সারা বছর এই শিম চাষ করা যায়। তাই একে বারমাসি শিম বলে।
অটো শিমের বীজ বপন
বীজ বপনের ৪৫ দিনেই ফুল চলে আসে। তাই এটি আগাম শিম। অনেক বছর ধরে রাজশাহী, পাবনা, শেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, খুলনা সহ আরো বহু জায়গায় এই শিমের প্রায় একচেটিয়া রাজত্ব চলে আসছে। শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিণ, কার্তিক, অগ্রাহায়ন এই পাঁচ মাস এই শিমটি বাজার দখল করে থাকে। এ সময় বাজার মূল্যও চড়া থাকে। পৌষ মাসে দেশি শিমের আবির্ভাব হলে বাজারমূল্য পড়ে যায়। তখন এই শিম চাষিরা তাদের গাছ কেটে ফেলে বা বীজ তৈরী করে।
শিমটি দেখতে সবুজ, মাংসল, সাইজে বড় ও চ্যপ্টা, খেতে নরম ও সুস্বাদু। তাই ক্রেতারা পছন্দ করে।
শিম মাংসল, চোচা মোটা, তাই ওজনে ভারি হয়।
শিমের গ্রোথ অনেক বেশি। বীজ হওয়ার আগেই শিমের ওজন হয়ে যায়। তাই তাড়াতাড়ি শিম সংগ্রহ করা যায়।
গাছের রোগ-বালাই ও পোকা-মাকড় কম। সহজে ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় না।
গ্রীষ্মকালীন জাত হওয়ায় এর প্রতিকূল আবহাওয়া সহনশীলতা খুব বেশি।
আগাম চাষে এর রেজাল্ট মারাত্মক।
দীর্ঘ সময় ধরে, প্রায় শ্রাবন মাস থেকে ফাল্গুন মাস অর্থাৎ ৮ মাস ধরে বিরতিহীনভাবে ফলন দিতেই থাকে।
গাছের গ্রোথ ভালো, প্রচুর ফুল এবং ফলের ধরন ভালো, তাই ফলন বেশি হয়। এ শিম চাষ করে কৃষককে কখনও নিরাস হতে হয় না।
এটি বানিজ্যিক শিম, বহু কাল ধরে বানিজ্যিকভাবে জনপ্রিয়তার সাথে চাষ হয়ে আসছে।
মোটকথা, এ সকল কারনের জন্য যখন ভোক্তা, বিক্রেতা আর উৎপাদনকারী সকলেই খুশি, তখন কার বাপের কী? চাষ শুরু করে দিন।
সংক্ষেপে অটো শিম চাষ পদ্ধতি
১০ কাঠা (অর্ধ বিঘা) জমির জন্য ১২ কেজী টিএসপি + ৮ কেজী পটাশ + ১ কেজী কার্বোফুরান + ৪ কেজী জিপসাম আর বেশি পরিমান জৈব সার শেষ চাষের আগে ছিটিয়ে দিতে হবে। —- ৫ ফিট পর পর আশেপাশের মাটি কোদাল দিয়ে টেনে এনে উচু ঢিবি আকৃতির মাদা করতে হবে। বর্ষায় যাতে গোড়া পচে না যায়, তার জন্য এই ধরনের মাদা। প্রতি মাদায় ৪-৫ টি বীজ বপন করতে হবে। —- গাছ লতিয়ে গেলে মাচার ব্যবস্থা করতে হবে। নিয়মিত আগাছা দমন করতে হবে। শোষক লতা অপসারণ করতে হবে। লতা পেচিয়ে গেলে খুলে দিতে হবে। মাঝে মাঝে পাতা ছাটাই করতে হবে৷
পোকামাকড় ও রোগবালাই
গ্রীষ্মকালীন শিম হওয়ায় প্রচুর পোকামাকড় আক্রমন করে। ফল ছিদ্রকারী পোকা আর সাদা মাছি দমনের জন্য নিয়মিত এমামেকটিন বেনজয়েট/সাইপারমেথ্রিন/ এবামেকটিন + ইমিডাক্লোরপিড/এসিটামিপ্রিড স্প্রে করতে হবে। আদ্র আবহাওয়ায় পচনের আক্রমণ বেশি হয়। তাই নাটিভো / এমিস্টারটপ স্প্রে করতে হবে। পোকার আক্রমণ বুঝে সপ্তাহে ২-৩ দিন স্প্রে করতে হবে। এর সাথে পিজিআর ও অনুখাদ্য প্রয়োজন বুঝে স্প্রে করতে হবে।
একটি_অভিজ্ঞতাঃ
প্রতিটা ফসল রোদ্রে ভালো হয়। তবে গ্রীষ্মকালীন শিম চাষের ক্ষেত্রে ১/৪ অংশ ছায়া পড়ে, এমন জায়গায় চাষ করেও ভালো ফলন পাওয়া যায়, বিশেষ করে যারা অবানিজ্যিক চাষ করবেন, তাদের জন্য এ পরামর্শ। মূলত শিম গাছের জন্য ঠান্ডা আবহাওয়া উপযুক্ত। সে কারনে হয়তবা এমনটা হতে দেখা গেছে।
আমার কথাঃ
এই শিমটি ব্যপকহারে গ্রিষ্মকালে চাষ হয়ে থাকলেও মূলত আমি গ্রিষ্মকালীন শিম চাষের পক্ষে না। এর কারণ হিসেবে আমি বলবো… ১. অনিয়ন্ত্রিত বিষ প্রয়োগ। ২. আবহাওয়ার প্রতিকূলতা। মাত্রাতিরিক্ত বিষ প্রয়োগে কৃষক ও ভোক্তার শারীরিক ক্ষতি হয়। এছাড়াও অনেক সময় আবহাওয়ার প্রতিকূলতার জন্য ফলন কম হয়। বহু কিছু স্প্রে করেও ফুল ঝরা ঠেকানো যায় না। তাই আমি এটি আগাম চাষের জন্য সাজেস্ট করবো৷ আগাম চাষের জন্য শ্রাবণ মাসের ১-১৫ তারিখের মধ্যে লাগিয়ে দিতে হবে৷ অল্প পরিশ্রমে, আশ্বিন-কার্তিক মাসে ভালো ফলন হবে, মূল্যেও ভালো পাওয়া যাবে৷ অভিজ্ঞ, অনভিজ্ঞ সকল চাষিরাই চাষ করতে পারবে।
তথ্যসূত্রঃ সাকসেস ফার্ম