রাজশাহীর পবা উপজেলার চর মাজারদিয়ার গ্রামের আবুল কালাম (৫৫)। বেলে দোঁয়াশ মাটিতে পেয়ারা চাষে ভাগ্যকে জয় করে নিয়েছেন তিনি। ধু-ধু চরে পেয়ারা চাষে বিঘায় লাভ আড়াই লাখ টাকা হবে বলে আশা করছেন এই চাষি।
আবুল কালাম এখন অত্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন। ব্যবস্যা-বাণিজ্যের পাশাপাশি পেয়ারা চাষ করে রীতিমতো স্বাবলম্বী হয়েছেন।
কথা হয় আবুল কালামের সাথে। তিনি এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, বছর খানেক আগে পেয়ারা বাগান করার সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রথমে ২ বিঘা জমিতে পেয়ারার চাষ শুরু করেন। ২ বিঘা জমিতে ২০০ থেকে আড়াই’শ টি পেয়ারার চারা রোপণ করেন। নিবিড় পরিচর্যায় বেড়ে উঠে পেয়ারা গাছ। বছর যেতে না যেতেই আসে ফুল-ফল। এর পর প্রতিটি পেয়ারা মুড়ে দেওয়া হয় বিষমুক্ত ফ্রুট ব্যাগে।
আবুল কালাম জানান, বাগানের প্রতিটি থাই পেয়ারার ওজন হয় ৩০০ থেকে ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত। প্রতিটি গাছ থেকে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৩৫ কেজি করে পেয়ারা পাওয়া যায়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, এই চরের প্রায় মাঠেই এখন পেয়ারার চাষে ভরে গেছে। চারিদিক সবুজের চাদরে ঢেঁকে আছে। পাহাড়ি ফল মাল্টাও ফলতে শুরু করেছে প্রত্যন্ত চরে। আবার কোথাও লাউয়ের মাচা, ঝিঙ্গে, পটল, বেগুনের খেত।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চরে পেঁয়ারার আবাদ হয়েছে ১০৫ হেক্টর জমি।ফল চাষ বেশ লাভজনক হওয়ায় ঝুঁকছে চাষিরা। অনেকেই আবার অন্যান্য সবজি চাষের বদলে চাষ করছেন ফল। কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতায় বেশ লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। তবে, সাম্প্রতিক পেঁয়ারার বাড়ন্ত গাছ মারা যাওয়া বিষয়ে কোন সুরাহা করতে পারেননি কৃষি দপ্তর। এমনটিই জানিয়েছেন কৃষকরা।
চরে পেয়ারা চাষের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে শহরের মানুষ লিজ(ঠিকা) নিয়ে তারা চাষ করতো, এখন আমি নিজেই করি। বর্তমানে এটাই আমার কাজ। বেশ ভালোই লাগছে। এই চাষে খুব তাড়াতাড়ি স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব। ২ বিঘার পেয়ারা বাগান থেকে বছরে প্রায় দেড় লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি হয়।
শ্রমিকের মজুরিসহ আনুষাঙ্গিক খরচ বাদে তাদের লাভ হয় প্রায় এক লাখ টাকা। নিয়মিত পরিচর্যা করে চাষ করলে প্রতিটি পেয়ারা গাছ থেকে ১ হাজার টাকার অধিক লাভবান হওয়া যায়। এবার বাজারে চাহিদা ব্যাপক এবং খরচ কম হওয়ায় বেশি লাভজনকও বটে। এক বিঘা জমিতে যেখানে ধান চাষ করে বছরে ১০ হাজার টাকা লাভ করা যায় না, সেখানে পেয়ারা চাষ করে লাখ টাকা লাভ করা যায়। যোগ করেন এইচাষি।
পেয়ারা চাষ খুবই লাভজনক। পেয়ারা বাগানে এ বছর প্রচুর পেয়ারা ধরেছে। বিঘা প্রতি প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা লাভ হবে। আর বাজারে পেয়ারার চাহিদাও বেশ ভালো। সারা বছরই প্রায় পেয়ারা ধরে গাছে। পেয়ারা চাষ সম্পর্কে তিনি বলেন, পেয়ারা চাষের জন্য মাটিটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেলে-দোঁয়াশ মাটিতে পেয়ারার ভালো ফলন পাওয়া যায়।
তাছাড়া পেয়ারা চাষের জন্য মূলত গাছের পরিচর্যার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কাটিং, পেয়ারা ব্যাগিং করলে ভালো হয়। বাগানে পোকামাকড় দমনে দুই তিনবার কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। অনেকে বলেন কীটনাশক ব্যবহার না করেই হয় । আসলে এটা সম্পূর্ণ সঠিক নয়; কোনো যাযগায় কম আর কোথাও বেশি লাগে এইতো। তবে কৃষি বিভাগের পরামর্শে ভিটামিন ওষুধ বা কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে ।
এছাড়া পোকামাকড় ঠেকাতে পেয়ারা একটু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পলিথিন ব্যাগে ঢুকিয়ে মুখ বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে পেয়ারা ভালো থাকে। এ কারণে মানুষের চাহিদা বেশি থাকে। তাই বিক্রি করতে কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না। এছাড়াও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে পেয়ারা কিনে নিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে পবা উপজেলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, এই ১০৫ হেক্টর জমিতে পেয়ারা চাষ হচ্ছে। পেয়ারা চাষ করে অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তাদেরকে নানা পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে।
চরের উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, কয়েক বছর ধরেই বাণিজ্যিকভাবে পেয়ারার চাষ হচ্ছে। অধিক সেচের ফসলের (ধান, আলু) ওপর চাপ কমাতে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে কম সেচের সবজি ও পেয়ারা চাষের আবাদ বাড়ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ডা. আব্দুল আউয়াল এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, কম খরচ ও পরিশ্রমে বেশি লাভ পাওয়ায় চরাঞ্চলের কৃষকরা পেঁয়ারা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। চাষিদের সবধরনের সহযোগিতা দি”িছ আশাকরি এবারের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।
তথ্যসূত্রঃ এগ্রিকেয়ার ২৪