ইউটিউব দেখে ফল চাষ করে মাসে আয় লক্ষাধিক টাকা

ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলা শহরের পাশ ঘেঁষে বেয়ে যাওয়া কপোতাক্ষ নদীর তীরে বেড়ে উঠে যুবক আব্দুর রশিদ। ছাত্র জীবনে অত্যন্ত মেধাবী হলেও লেখাপড়া করা হয়নি তার। কর্মজীবনের শুরু থেকে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা ও অন্যান্যদের সহযোগীতায় কৃষি কাজ শুরু করেন তিনি। সব সময়ই তিনি তার চাষে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করেছেন।

 

 

তার শখ কৃষি ক্ষেত্রে নতুন নতুন সবজি, ফল ও ফসলের চাষ করা। আর এর জন্য তিনি ইউটিবে কৃষি কাজ সংক্রান্ত ভিডিও দেখতেন। এভাবে দেশের যে কোন প্রান্তে নতুন কোন চাষের সংবাদ পেলে। মাসে একদিন সময় করে সেখান থেকে ঘুরে অসেন। এভাবেই তিনি তার চাষে সফলতা দেখিয়ে চলেছেন। সাথে নিজের পরিবারের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন। আব্দুর রশিদ ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার যুগিহুদা গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে।

 

 

বর্তমানে তার দুই বিঘা জমিতে গোল্ডেন কালারের এক নতুন জাতের তরমুজ “তৃপ্তি” চাষ করেছেন। রোজার ১০ দিন থেকে তরমুজ বিক্রি শুরু করেছে। স্থানীয় ও ঢাকার ব্যাপারিরা খেতে এসে তরমুজ নিয়ে যাচ্ছে। এই দুই বিঘা তরমুজ চাষ করতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। এখান থেকে খরচ বাদে দেড় লাখ টাকা লাভ করতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি।

 

 

মাত্র দুই মাসে ভিন্ন জাতের এ তরমুজ চাষ দেখে জেলার অন্য কৃষকরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। এছাড়া কৃষক আব্দুর রশিদ তরমুজের পাশাপাশি তার পাঁচ বিঘা জমিতে মাল্টা, কমলা লেবু ও আঙ্গুরের চাষ করেছেন। আঙ্গুর চাষ এবারই প্রথম শুরু করেছেন তিনি। ১০ কাঠা জমিতে ছমছম ও সুপার সনিকা জাতের ৭৫ টি আঙ্গুরের গাছ রোপণ করেছেন।

 

 

ভারত ও ইটালি থেকে এসব চারা সংগ্রহ করা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। যদি আশানুরূপ ফল পান তাহলে কমপক্ষে ৪০ থেকে ৫০ বছর এসব গাছ থেকে ফল পাবেন। তবে এখনো পর্যন্ত দেশে চাষ হওয়া আঙ্গুরের স্বাদ ভালো না হলেও সফল এ কৃষকের দাবি তার আঙ্গুর সুস্বাদু হবে।

 

 

এর আগে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্লাক বেরি (কালো রঙের) ও গোল্ডেন ক্রাউন (হলুদ রঙের) জাতের তরমুজ চাষ হতে দেখা গেছে। বর্তমানে সদর উপজেলায় ৪ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে এবং জেলায় এ সংখ্যা প্রায় ১৫ হেক্টর।

 

 

তরমুজ চাষি কৃষক আব্দুর রশিদ জানান, বিভিন্ন সময় ইউটিবে কৃষি কাজ সংক্রান্ত অনেক ভিডিও দেখতাম। এছাড়া বিভিন্ন কৃষকদের মাধ্যমে খোঁজ রাখতাম কোথায় কোন চাষ হচ্ছে। নতুন কিছু মনে হলেই সেখানে ছুটে যেতাম। সেখান থেকে চাষ পদ্ধতি রপ্ত করে নিজে চাষ করতাম।

 

 

এভাবে চলছে আমার চাষকর্ম। তিনি আরো জানান, বর্তমানে আমার দুই বিঘা জমির তৃপ্তি জাতের তরমুজ বিক্রি শুরু করেছি। জমিতে যে তরমুজ আছে তা প্রায় দুই লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবো। তাতে খরচ বাদে লাভ হবে দেড় লাখ টাকা।

 

 

বিষয়টি নিয়ে মহেশপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা অমিত বাগচী জানান, পানি নিষ্কাষণ ও বেলে দো-আঁশ মাটি তরমুজ চাষের জন্য বেশি উপযোগী যা ঝিনাইদহে বিদ্যমান। আর মান ভালো হওয়া ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে এ জেলার তরমুজের চাহিদা রয়েছে অনেক।

 

তথ্যসূত্রঃ জাগো নিউজ ২৪