ফলের বাগান করার নিয়ম বা ফল গাছ লাগানর নিয়ম অনেক লোকই জানেনা ,তাই চলুন জেনে আসি কি ভাব ফলের বাগান করা যায় ।খাদ্য ও পুষ্টির জন্য বাগান আকারে আরও বেশি ফলের গাছ লাগানো, ফলের চাহিদা পূরণ, গাছের সংস্থান বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি পরিবেশ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে মনোনিবেশ করা আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব।
ফল ফসলের সমস্যা, সম্ভাবনা এবং ফলের বৈশিষ্ট্য মাঠের ফসলের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। সুতরাং, ফলের চাষ এবং নতুন বাগান স্থাপনের জন্য জমির ও ফসলের উপর কৃষক এর বিভিন্ন জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। বাংলাদেশে ফল উৎপাদনে অনেক সমস্যা রয়েছে। সে সমস্যা গুলা আমেদের সুন্দর ভাবে মুকাবেল করা প্রয়োজন।
অনেকে বাগানে ফলের গাছ লাগাতে চান। বাগানে আবাদ করার আগে যদি কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় তবে ভবিষ্যতে লাভের মুখ দেখা সহজ হবে। শুধু তাই নয়, দেশে বাগান বাড়লে বিদেশ থেকে ফলের আমদানিও হ্রাস পাবে। আপনি বাগানের গাছ লাগিয়েও অতিরিক্ত আয় করতে পারেন।
বাগানের সার্বিক সুরক্ষার জন্য জমি প্রস্তুত করার সাথে, বাগান এলাকার চারপাশে স্থায়ী বেড়া, এমনকি পাকা দেয়াল নির্মাণও সম্পন্ন করা যেতে পারে। প্রতিটি গাছের চারপাশে বাঁশের বেড়া লাগালে গাছগুলি কে গরু-ছাগল সহ অন্যান্য প্রাণী থেকে গাছকে রক্ষা করতে পারে। তবে মিশ্র বাগানগুলি একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প।
বাংলাদেশের গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপনিবেশীয় জলবায়ু যা ফল উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত সহায়ক। বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরণের ফল রয়েছে এবং প্রায় ৭০ প্রজাতির ফল এখানে জন্মায়, এর একটি ছোট অংশ বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়। বাংলাদেশের জমির পরিমাণ ও উৎপাদনের পরিমাণ বিবেচনা করে, বেশি পরিমাণে যে ফলন হয় সেগুলি হ’ল কাঁঠাল, আম, লিচু, লেবুজাতীয় ফল, আনারস, কলা, কুল, পেঁপে, পেয়ারা এবং নারিকেল যা প্রধান ফল হিসাবে বিবেচিত হয়। এছাড়া বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে ছোট ছোট ফল জন্মে।
বর্তমানে, পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক ফলের প্রয়োজন ২০০ গ্রাম চাহিদার বিপরীতে মাত্র ৭৪.৪২ গ্রাম। যেমন, ১৬ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে ফলের বার্ষিক চাহিদা ১১৬.৮০ লক্ষ মেট্রিক টন। বাংলাদেশের ১.৩৮ লক্ষ হেক্টর জমি থেকে প্রায় ৪৩.৪৭ লক্ষ মেট্রিক টন ফল উত্পাদন হয় (বিবিএস, ২০১২) ফলস্বরূপ, আমাদের বর্তমান উত্পাদনের কেবলমাত্র ৩৭.২২% পূরণ করা হচ্ছে। অন্যদিকে, আমাদের দেশে উত্পাদিত ৬১% ফল মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত পাওয়া যায় এবং বাকি আট মাসে অবশিষ্ট ফলগুলির ৩৯ % উত্পাদন হয়। সেপ্টেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত আট মাসে মাথাপিছু ফলের প্রাপ্যতা আরও কম থাকে।
বাংলাদেশে ফল উৎপাদনে বহুবিধ সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-
চাষোপযোগী জমির স্বল্পতা।
উচ্চফলনশীল, রোগ ও পোকামাকড় সহনশীল, প্রতিকূল আবহাওয়া উপযোগী উন্নত জাতের অভাব।
অনিয়মিত ফল ধারণ।
মৌসুমভিত্তিক প্রাপ্যতা।
অপর্যাপ্ত গুণগতমানসম্পন্ন রোপণ দ্রব্য।
পরিচর্যার অভাব ও রোগ ও পোকামাকড়ের উচ্চ প্রাদুর্ভাব।
উচ্চ সংগ্রহোত্তর অপচয়।
ফল চাষে কৃষকদের সচেতনতার অভাব।
প্রযুক্তি হস্তান্তরে ধীরগতি ও বাজারজাত করণে প্রতিবন্ধকতা
স্থায়ী বেড়া দিয়ে বাগানকে রক্ষার করুনঃ
বিভিন্ন ঝামেলা থেকে বাঁচাতে বাগানটির চারদিকে বেড়া দিতে হবে । স্থায়ী বেড়াগুলি ইট দিয়ে নির্মিত হওয়া উচিত, অস্থায়ী বেড়াগুলি বাঁশের চটা দিয়ে তৈরি করা উচিত বা জীবন্ত বেড়া গাছ হতে হবে। জীবন্ত বেড়া দীর্ঘস্থায়ী। এটি কম খরচে করা যেতে পারে। এর জন্য বাইরের সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া যেতে পারে। হেজ গাছগুলিও সরাসরি রোপণ করা যায়।
কাঁটাতারের টানতে কংক্রিটের তৈরি খাম বা ভূতাত্ত্বিক খুঁটি স্থাপন করা যেতে পারে। হেজ গাছগুলি ঝোপঝাড়, ছাঁটাইয়ের জন্য উপযুক্ত, চিরসবুজ, ছাগলের আকর্ষণমুক্ত, কমযত্নে জন্মানোর উপযোগী এবং পোকা-মাকড় ও রোগবালাই প্রতিরোধ্য হলে ভালো হয়। দুরন্ত, কাঁটা-মেহেদী, শ্যাওড়া, করঞ্জা ও কামিনী উঁচু হেজ এবং জাস্টিসিয়া, ল্যান্টানা, অ্যাকালিফা, রঙ্গন, পাতাবাহার ও কোচিয়া হেজেস তৈরির জন্য উপযুক্ত।
রোপণ উপযোগী ফল গাছের তালিকাঃ
কারও পছন্দ অনুযায়ী ফলের চাষাবাদ ও বাছাইয়ের সুবিধার্থে জলবায়ুর উপযোগী জমির অবস্থান বিবেচনা করে , দেশ-বিদেশ থেকে সব ধরণের ফল বাছাই করে উন্নত জাতের বাগান তৈরির ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার , স্থানীয় চাহিদা এবং চাষাবাদে লাভজনকতা এমন ফল গাছ সংগ্রহ করা উচিৎ।
কিছু ফলের গাছ রোপণের এক বছরের মধ্যে ফল ধরতে শুরু করে। আবার কিছু ফলের গাছ লাগানোর পরে ফল ধরতে ৫ থেকে ১০ বছর সময় লাগে। রোপণের পরে ফল সংগ্রহ করতে দীর্ঘ সময় লাগে। স্বল্পমেয়াদী ফলের চাষ (নিম্ন উচ্চতা) বা মৌসুমী ফসলের রোপণ ব্যবস্থার সময়কালে অতিরিক্ত ফসল নিশ্চিত করে ব্যয়টি কাটাতে ব্যবহার করা যেতে পারে। তদুপরি, এ জাতীয় রিলেটীভ ফসলের চাষ অপ্রত্যক্ষভাবে বাগানের যত্ন নেয়, যা ফল গাছ গুলিকে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে এবং আরও বেশি ফল ধরতে সহায়তা করে।
বেশি লাভজনক ফলঃ
বেশ কয়েকটি ফল রয়েছে যা সুপরিকল্পিত এবং সু-উন্নত বাগানে রোপণ করতে খুব লাভজনক। এগুলোর মধ্যে কলা, পেঁপে তরমুজ, আনারস, আম, কূল, পেয়ারা, কাগজিলেবু, কমলা, মালটা, লিচু, বেল, কদবেল, লটকোন, শরিফা, আমড়া, মিষ্টি তেঁতুল, খাট জাতের নারিকেল অন্যতম।
জমি নির্বাচনঃ
বেশিরভাগ ফলগুলি বহুবর্ষজীবী, তাই বাগান স্থাপনের জন্য বন্যামুক্ত, সেচ সুবিধা এবং উচ্চতা প্রয়োজন। দোঁ-আশ ও বেলে দোঁ-আশ মাটি ফল চাষের জন্য বেশি উপযোগী।
রোপণ সময় ও পদ্ধতি : বর্ষার আগে (বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাস) ফল গাছ লাগানো উত্তম। সেচ ও পানি নিকাশ সুবিধা থাকলে সারা বছরই গাছ লাগানো যায়। বিকাল বেলা গাছ লাগানো ভালো। চারা/কলম লাগানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন কোন ক্রমেই গাছের গোড়ায় শিকড়সহ মাটির বলটি ভেঙে না যায়। পলিথিন ব্যাগে চারা/কলম সংরক্ষিত থাকলে পলিব্যাগটি ছুরি বা ব্লেড দিয়ে সাবধানে তা অপসারণ করতে হবে।
রোপণ পদ্ধতিঃ
বর্ষার আগে (বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাস) ফলের গাছ লাগানো ভাল। সেচ ও নিকাশির সুবিধা থাকলে সারা বছরই গাছ লাগানো যায়। বিকেলে গাছ লাগানো ভাল। চারা / কাটা গাছ লাগানোর সময় যত্ন নেওয়া উচিত যাতে গাছের গোড়ায় শিকড়ের মাটি যেন কোনওভাবেই না ভেঙে যায়। চারা / কলম যদি পলিথিন ব্যাগে সংরক্ষণ করা হয় তবে পলিব্যাগটি সাবধানে একটি ছুরি বা ফলক দিয়ে খুলে ফেলা উচিত এবন তার পর ফল গাছ রোপণ করতে হবে ।
তথ্যসূত্রঃ এগ্রো হেভেন বিডি