অনেকটা বরবটির মতো দেখতে এই শিম সারা বিশ্বেই চাষ হয়। এটি একটি শীতকালীন ফসল। এটিকে স্থান ভেদে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। যেমন: ফ্রেঞ্চ বিন (French bean), ঘোড়া শিম(Horse bean), ব্রড বিন, ফাবা বিন ইত্যাদি।
এই শিম একাধিক উদ্দেশ্যে চাষ করা হয়। অনেক দেশেই মানুষের খাদ্য হিসেবে এর চাষ রয়েছে। এছাড়া পশুখাদ্য এবং আচ্ছাদন বা মালচিং ফসল (Cover crop) হিসেবেও বিন বা শুঁটি জাতীয় অন্য ফসলের সঙ্গে চাষ করা হয়।
ভারতের মহারাষ্ট্র, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, জম্মু-কাশ্মীর এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তরাঞ্চলের জেল গুলোতে ফ্রেঞ্চ বিন ব্যাপকভাবে চাষ হয়।
বাংলাদেশেও এই শিম চাষ শুরু হয়েছে। এমনটি এই শিমের বিচি (বীজ) বিদেশে রপ্তানিও হচ্ছে। বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলে ফ্রেঞ্চ শিম বা ঘোড়া শিম চাষ করা হচ্ছে রপ্তানির উদ্দেশ্যে।এর শুকনো বীজ রপ্তানি করা হয়।
সিলেটের পলি মিশ্রিত জমিতে এই সবজি খুব ভালো উৎপন্ন হয়। শিম জাতীয় এ সবজির বীজ খাওয়া হয়। সিলেটে এই সবজিকে ‘ফরাস বিচি’ বলা হয়।
একই প্রজাতির একটু ভিন্ন এই শিম দেশের অন্যান্য জেলায়ও উৎপাদন করা হয়। আর একই প্রজাতির ‘ফ্রেঞ্চ বিন’-এর চাষ সম্প্রতি মাগুরা জেলায় করা হচ্ছে। অন্যান্য জেলায় এই প্রজাতির কিছুটা ভিন্ন শিমকে ফেলন বা ফেলনা বলা হয়।
ফ্রেঞ্চ বিনের জাত
ঝোপ (ঝাটি ) গাছ: পুসা পার্বতী, বউনটিফুল, অর্ক সুবিধা,সূর্য, পান্থ অনুপম, অর্ক কোমল।
লতানো গাছ: কেন্টুকি ওয়ান্ডার, পেন্সিল, পুসা হিমলতা, ব্লু লেক।
চাষ পদ্ধতি
ফ্রেঞ্চ বিন বা ঘোড়া শিম একটি রবি শস্য। অর্থাৎ শীতকালীন ফসল। আর অন্যান্য শিম ও শুঁটি জাতীয় ফসলের মতোই এর চাষ পদ্ধতি। তবে কিছু জাত গ্রীষ্ম ও বর্ষাতেও চাষ করা যায়।
মাটি
ভালো পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাযুক্ত, দোআঁশ মাটি বা কাদা দোআঁশ মাটি এবং PH ৫.৫ – ৬.০ থাকলে সেই মাটিতে ভালো ফলন পাওয়ায়।
বীজ বোনার সময়
গ্রীষ্মকালীন: ফাল্গুন – চৈত্র,
বর্ষাকালীন: জ্যৈষ্ঠ – আষাঢ়,
রবি: কার্তিক – অগ্রহায়ণ
শীতকালে মাটিতে সারিবদ্ধভাবে একটি করে বীজ বোনা হয়। এক ফুট অন্তর একেকটি গাছ দেড় থেকে দুই ফুট উঁচু হয়ে থাকে।
বীজের হার
ঝোপ গাছের জন্য: ২০ – ৩০ কেজি প্রতি একর। লতানো গাছের জন্য: ১০-১৫ কেজি প্রতি একর।
বীজ বসানোর দূরত্ব
ঝোপ গাছের জন্য: ১.৫ ফুট x ২ ইঞ্চি
লতানো গাছের জন্য: ৩ ফুট x ৩ ইঞ্চি
বীজ শোধন
বীজ বসানোর ২৪ ঘণ্টা আগে
TRICHODARMA VIRIDE @ 4-5 GM /1KG
CARBENDAZIM 50% WP 2 GM / 1 KG
সার প্রয়োগ
জমির মাটি পরীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী সার ব্যাবহার করা উচিৎ। সাধারণত বলা যায় একর প্রতি ৪ টন জৈব সার ও মূলসার হিসাবে একর প্রতি ১৫ কেজি নাইট্রোজেন, ২৪ কেজি ফসফেট ২৪ কেজি পটাশ এবং চাপান সার হিসাবে ৫ কেজি নাইট্রোজেন এবং ৮ কেজি পটাশ ফুল আসার সময় প্রয়োগ করা হয়। এর সাথে প্রয়োজন মতো অনুখাদ্য ব্যবহার করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ
প্রতি গাছে নিচের দিকে ঝুলে থাকে ৫ থেকে ৭ ইঞ্চি লম্বা শিম। প্রতি গাছে ২৫ থেকে ৩০টি শিম ধরে। এই শিম খাওয়া হয় না। বীজ বোনার ২ মাস পর থেকে পরবর্তী ২ মাস পর্যন্ত ফসল তোলা যায়। শিম থেকে বীজ বের করে মাছ দিয়ে রান্না করে বা ডাল রেঁধে খাওয়া হয়। একেকটি শিমে ৭ থেকে ৯টি বীজ পাওয়া যায়।
সবজির জন্য: বিন সাধারণত জাত অনুযায়ী ৪০-৫০ দিন পর থেকে সবজির জন্য তোলা যায়। ফসল খুব সকালে বা বিকালের পর তোলা ভালো।
ডাল হিসেবে: বিন ১২৫-১৩০ দিনের মাথায় তোলা যায়। এই সময় গাছের কান্ড কেটে দেওয়া হয় এবং জমিতেই ফেলে রাখা হয় যার ফলে দানার রঙের পরিবর্তন হয় এবং দানা পুষ্ট ও শক্ত হয় আর পাতাগুলো ঝরে পড়ে।
প্রথমে শিম তুলে বীজ বের করে পানিতে ভিজিয়ে ছাল ছাড়িয়ে নিতে হয়। প্রবাসী সিলেটীদের কাছে বীজটি প্রিয় বলে ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ কয়েক দেশে তা রফতানি করা হয়।
তথ্যসূত্রঃ কর্ষণ