মাছের উৎপাদন বাড়াতে কিভাবে খাবার তৈরি করবেন

বিভিন্ন খাদ্য উপাদানের মিশ্রণে মৎস্য খাদ্য তৈরী করতে গিয়ে সাধারণত একটা সমস্যা দেখা দেয়। সেটা হচ্ছে, কোন উপাদান কত অনুপাতে মেশাতে হবে। খাদ্য উপাদানের অনুপাত মিললে খাদ্যে আমিষের শতকরা হার মেলেনা, আবার আমিষের শতকরা হার মিললে খাদ্য উপাদানের অনুপাত মেলেনা। এসব ক্ষেত্রে পিয়ারসন’স স্কয়ার মেথড ব্যবহার করে সঠিক মাত্রায় খাদ্য উপাদানগুলো যোগ করে নির্দিষ্ট হারের আমিষ সমৃদ্ধ খাদ্য অনায়াসে তৈরী করা যায়। অন্যান্য আনুপাতিক হিসাবের ক্ষেত্রেও পদ্ধতিটি সফলভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

 

মৎস্য খাদ্য তৈরীর জন্য খাদ্য প্রস্তুতকারক বা চাষিরা সাধারণত: ফিশ মিল, চাউলের কুড়া, গমের ভূসি, সয়াবিন মিল, সরিষার খৈল, ভূট্টার গুড়া, বোন ও মিট মিল ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকেন। কোন কোন ক্ষেত্রে ক্ষুদিপানা, স্পাইরুলিনা প্রভৃতি ফিড সাপ্লিমেন্ট হিসেবেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। খাদ্য তৈরীর ক্ষেত্রে যে উপাদানই ব্যবহার করা হোকনা কেন পিয়ারসন’স স্কয়ার পদ্ধতিতে খাদ্য তৈরী করতে হলে প্রতিটি উপাদানের আমিষের শতকরা হার সঠিকভাবে জানা থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে, নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। এখানে আমরা আনুমানিক তথ্য দিয়ে অংক করব। পরবর্তীতে পৃথক সারণীতে খাদ্য উপাদানগুলোর আমিষের সঠিক মাত্রা কি হবে নির্ভরযোগ্য উৎসের সহায়তায় তা প্রদর্শন করব।

 

পদ্ধতি -১

মনে করি, একজন মৎস্য চাষি/মৎস্য খাদ্য উৎপাদনকারী সরিষার খৈল এবং গমের ভূসি সহযোগে একটি খাদ্য তৈরী করতে চায় যার আমিষের হার হবে ২৫%। তাহলে তাকে কোন উপাদান কত অনুপাতে মেশাতে হবে। নিচের চিত্র টি লক্ষ করুনঃ

সরিষার খৈল-আমিষ ৩০%
গমের ভূসি-আমিষ ১৪%

সরিষার খৈল মেশাতে হবে=১৪-২৫ = ১১, ১১/(৫ + ১১)× ১০০ = ৬৮.৭৫
গমের ভূসি মেশাতে হবে= ৩০-২৫ = ৫, ৫/(৫ + ১১) × ১০০ = ৩১.২৫

তাহলে দেখা যাচ্ছে, সরিষার খৈল ও গমের ভূসি মিলে ১০০০ গ্রাম/এক কেজি খাদ্য তৈরী করতে হলে সরিষার খৈল মিশাতে হবে ৬৮.৭৫ ×১০ = ৬৮৭.৫ গ্রাম এবং গমের ভূসি মিশাতে হবে ৩১.২৫ × ১০ = ৩১২.৫ গ্রাম। দুই উপাদান মিলে হলো ৬৮৭.৫ + ৩১২.৫ = ১০০০ গ্রাম/এক কেজি। এখন দেখতে হবে এই দুই উপাদান থেকে প্রাপ্ত আমিষের পরিমাণের যোগফল ২৫% হয় কিনা।

 

১০০ গ্রাম সরিষার খৈল থেকে পাওয়া যায় = ৩০ গ্রাম আমিষ
৬৮৭.৫ গ্রাম সরিষার খৈল থেকে পাওয়া যায় = ২০৬.২৫ গ্রাম আমিষ

আবার, ১০০ গ্রাম গমের ভূসি থেকে পাওয়া যায় = ১৪ গ্রাম আমিষ
৩১২.৫ গ্রাম গমের ভূসি থেকে পাওয়া যায় = ৪৩.৭৫
অতএব, দুই উপাদান থেকে পাই ২০৬.২৫ + ৪৩.৭৫ = ২৫০ গ্রাম আমিষ/১০০০ গ্রাম খাদ্য, অতএব, শতকরা হার হবে ২৫%

 

পদ্ধতি -২

মনে করি, একজন মৎস্য চাষি/মৎস্য খাদ্য উৎপাদনকারী ফিশ মিল, সরিষার খৈল ও গমের ভূসি সহযোগে একটি খাদ্য তৈরি করতে চায় যার আমিষের হার হবে ২৫%। তাহলে তাকে কোন উপাদান কত অনুপাতে মিশাতে হবে। নিচের চিত্র টি লক্ষ করুনঃ

 

ফিশ মিল-আমিষ ৬০%
সরিষার খৈল-আমিষ ৩০%
গমের ভূসি-আমিষ ১৪%

 

এ ক্ষেত্রে তাকে একটি খাদ্য উপাদান ফিক্সড করে নিতে হবে। অর্থ্যাৎ যেটিতে আমিষের শতকরা হার সবচেয়ে বেশি এবং বাজার দরও বেশি সেরকম একটি উপাদানকে নির্দিষ্ট হারে (১০-২০%) প্রথমেই যোগ করে নিতে হবে। সুতরাং এক্ষেত্রে আমরা ফিশ মিলকে ফিক্সড করে নিতে চাই। অর্থ্যাৎ প্রথমেই ১০% ফিশ মিল নিয়ে নিলাম। তাহলে ১০% হিসেবে এক কেজি খাদ্য তৈরীতে ফিশ মিল প্রয়োজন হবে ১০০ গ্রাম, অর্থ্যাৎ ১০০০ গ্রাম খাদ্য তৈরিতে ফিশ মিলের আমিষ পাব = ৬০ গ্রাম বা ১০০ গ্রাম খাদ্য তৈরিতে ফিশ মিলের (১০% হিসেবে ১০ গ্রাম ফিশ মিল হতে) আমিষ পাব ৬ গ্রাম। তাহলে আমাদের আরও ২৫-৬ = ১৯ গ্রাম আমিষ প্রয়োজন হবে। যা আমরা সরিষার খৈল এবং গমের ভূসি থেকে পাব। কিন্তু আমরা ১০ গ্রাম ফিশ মিল পূর্বেই নিয়ে নেয়ায় খাদ্য উপাদান বাকি থাকবে ৯০ গ্রাম।

 

অর্থ্যাৎ ৯০ গ্রাম খাদ্য উপাদান থেকে পেতে হবে ১৯ গ্রাম আমিষ
বা, ১০০ গ্রাম খাদ্য উপাদান থেকে পেতে হবে ২১.১১

সুতরাং স্কয়ারের মাঝখানে বসবে ২১.১১ (১৯ বসানো যাবেনা, কেননা ১৯ বসালে দুই উপাদানের প্রতিনিধিত্ব ১০০ ভাগ হবেনা)
সরিষার খৈল মেশাতে হবে =১৪-২১.১১ = ৭.১১, ৭.১১/১৬×১০০×০.৯ = ৪০
গমের ভূসি মেশাতে হবে = ৩০-২১.১১ = ৮.৮৯, ৮.৮৯/১৬×১০০×০.৯ = ৫০

তাহলে দেখা যাচ্ছে, ফিশ মিল, সরিষার খৈল ও গমের ভূসি মিলে ১০০০ গ্রাম/এক কেজি খাদ্য তৈরি করতে হলে ফিশ মিল মিশাতে হবে ১০ × ১০ = ১০০ গ্রাম, সরিষার খৈল মিশাতে হবে ৪০ × ১০ = ৪০০ গ্রাম এবং গমের ভূসি মিশাতে হবে ৫০ × ১০ = ৫০০ গ্রাম। তিন উপাদান মিলে হলো ১০০ + ৪০০ + ৫০০ = ১০০০ গ্রাম/এক কেজি। এখন দেখতে হবে এই তিন উপাদান থেকে প্রাপ্ত আমিষের পরিমাণের যোগফল ২৫% হয় কিনা।

১০০ গ্রাম ফিশ মিল থেকে আমিষ পাওয়া যায় = ৬০ গ্রাম
১০০ গ্রাম সরিষার খৈল থেকে পাওয়া যায় = ৩০ গ্রাম আমিষ
৪০০ গ্রাম সরিষার খৈল থেকে পাওয়া যায় = ১২০ গ্রাম আমিষ

আবার, ১০০ গ্রাম গমের ভূসি থেকে পাওয়া যায় = ১৪ গ্রাম আমিষ
৫০০ গ্রাম গমের ভূসি থেকে পাওয়া যায় = ৭০ গ্রাম আমিষ
অতএব, তিন উপাদান থেকে পাই = ৬০ + ১২০ + ৭০ = ২৫০ গ্রাম আমিষ/১০০০ গ্রাম খাদ্য, অতএব, শতকরা হার হবে ২৫%

 

পদ্ধতি -৩

মনে করি, একজন মৎস্য চাষি/মৎস্য খাদ্য উৎপাদনকারী ফিশ মিল, সরিষার খৈল ও গমের ভূসি ও অটোকুড়া সহযোগে একটি খাদ্য তৈরি করতে চায় যার আমিষের হার হবে ৩০%। তাহলে তাকে কোন উপাদান কত অনুপাতে মিশাতে হবে। নিচের চিত্র টি ফলো করুইঃ

সয়াবিন কেক – আমিষ ৪০%
সরিষার খৈল – আমিষ ৩০%

গমের ভূসি – আমিষ ১৪%
অটোকুড় – আমিষ ১২%

এ ক্ষেত্রে তাকে খাদ্য উপাদানগুলোকে ০২ টি ভাগে ভাগ করে নিতে হবে। প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট ও বেসাল ইনগ্রেডিয়েন্ট। যে সব খাদ্য উপাদানের আমিষের পরিমাণ শতকরা ২০% ভাগের নিচে তাদেরকে বলা হয় বেসাল ইনগ্রেডিয়েন্ট এবং যেসব খাদ্য উপাদানের আমিষের পরিমাণ শতকরা ২০% ভাগের উপরে তাদেরকে বলা হয় প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট। পিয়ারসন্স স্কয়ারে যেহেতু দুটি উপাদানের বেশি ইনগ্রেডিয়েন্ট দেখানো যায়না সেহেতু, এখানে বেসাল ইনগ্রেডিয়েন্ট দুটির আমিষের গড় মান নিতে হবে এবং প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট দুটির গড় মান নিতে হবে। পরবর্তীতে ফলাফল সমান হারে ভাগ করে দিতে হবে।

 

গমের ভূসি ও অটোকুড়ার আমিষের শতকরা হারের গড় মান = (১৪ + ১২)/২ = ১৩
সয়াবিন কেক ও সরিষার খৈলের আমিষের শতকরা হারের গড় মান = (৪০ + ৩০)/২ = ৩৫

সয়াবিন কেক + সরিষার খৈল মেশাতে হবে = ১৩-৩০ = ১৭, ১৭/২২ × ১০০ = ৭৭.২৭
গমের ভূসি + অটোকুড়া মেশাতে হবে = ৩৫-৩০ = ৫, ৫/২২ × ১০০ = ২২.৭৩

অতএব, সয়াবিন কেক মেশাতে হবে ৭৭.২৭/২ = ৩৮.৬৩৫ গ্রাম
সরিষার খৈল মেশাতে হবে ৭৭.২৭/২ = ৩৮.৬৩৫ গ্রাম

অটোকুড়া মেশাতে হবে ২২.৭৩/২ = ১১.৩৬৫ গ্রাম
গমের ভূসি মেশাতে হবে ২২.৭৩/২ = ১১.৩৬৫ গ্রাম

চারটি উপাদান মিলে মোট ১০০ গ্রাম। যদি এক কেজি খাদ্য তৈরি করা হয় তাহলে প্রতিটি মানকে ১০ দ্বারা গুণ করতে হবে। এখন দেখতে হবে এই ৪ টি উপাদানের আমিষের অবদানের যোগফল ৩০% আমিষ হয় কিনা।

 

ধরি, এক কেজি খাদ্য তৈরি করতে হবে-অর্থ্যাৎ ১০০০ গ্রাম খাদ্য উপাদান প্রয়োজনঃ
অতএব, ৩৮৬.৩৫ গ্রাম সয়াবিন কেক থেকে পাব = ১৫৪.৫৪ গ্রাম আমিষ
৩৮৬.৩৫ গ্রাম সরিষার খৈল থেকে পাব = ১১৫.৯০৫ গ্রাম আমিষ

১১৩.৬৫ গ্রাম অটোকুড়া থেকে পাব = ১৫.৯১১ গ্রাম আমিষ
১১৩.৬৫ গ্রাম গমের ভূসি থেকে পাব = ১৩.৬৩৮ গ্রাম আমিষ
চারটি উপাদানের আমিষের অবদানের যোগফল দাঁড়ায় = ২৯৯.৯৯ বা ৩০০ গ্রাম/১০০০ গ্রাম খাদ্য উপাদান অর্থ্যাৎ ৩০%

 

পদ্ধতি -৪

মনে করি, একজন মৎস্য চাষি/মৎস্য খাদ্য উৎপাদনকারী ফিশ মিল, সয়াবিন কেক, সরিষার খৈল ও গমের ভূসি ও অটোকুড়া সহযোগে একটি খাদ্য তৈরি করতে চায় যার আমিষের হার হবে ৩০%। তাহলে তাকে কোন উপাদান কত অনুপাতে মিশাতে হবে। নিচের চিত্র টি ফলো করুইঃ

ফিশ মিল – আমিষ ৬০%
সয়াবিন কেক – আমিষ ৪০%

সরিষার খৈল – আমিষ ৩০%
গমের ভূসি – আমিষ ১৪%
অটোকুড়া – আমিষ ১২%

এ ক্ষেত্রে তাকে প্রথমে যে খাদ্য উপাদানটির আমিষের হার সবচেয়ে বেশি এবং বাজার দরও বেশি সেটি পূর্বেই নির্দিষ্ট মাত্রায় (১০-২০%) যোগ করে নিতে হবে। অবশিষ্ট খাদ্য উপাদানগুলোকে ০২ টি ভাগে ভাগ করে নিতে হবে। প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট ও বেসাল ইনগ্রেডিয়েন্ট। এরপর প্রত্যেক উপাদানের অবদানের অনুপাতের সমান হারে প্রাপ্ত ফলাফল ভাগ করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে, তিনটি উপাদান ও চারটি উপাদান দিয়ে তৈরি খাদ্যের উভয় নিয়মাবলী ফলো করতে হবে।

 

সমাধানঃ প্রথমেই ১০% ফিশ মিল নিয়ে নিলাম। তাহলে ১০% হিসেবে এক কেজি খাদ্য তৈরিতে ফিশ মিল প্রয়োজন হবে ১০০ গ্রাম, অর্থ্যাৎ ১০০০ গ্রাম খাদ্য তৈরিতে ফিশ মিলের আমিষ পাব = ৬০ গ্রাম বা ১০০ গ্রাম খাদ্য তৈরিতে ফিশ মিলের (১০% হিসেবে ১০ গ্রাম ফিশ মিল হতে) আমিষ পাব ৬ গ্রাম। তাহলে আমাদের আরও ৩০ – ৬ = ২৪ গ্রাম আমিষ প্রয়োজন হবে। যা আমরা সয়াবিন কেক, সরিষার খৈল এবং গমের ভূসি ও অটোকুড়া থেকে পাব। কিন্তু আমরা ১০ গ্রাম ফিশ মিল পূর্বেই নিয়ে নেয়ায় খাদ্য উপাদান বাকি থাকবে ৯০ গ্রাম।

 

অর্থ্যাৎ ৯০ গ্রাম খাদ্য উপাদান থেকে পেতে হবে ২৪ গ্রাম আমিষ
বা, ১০০ গ্রাম খাদ্য উপাদান থেকে পেতে হবে ২৬.৬৭

সুতরাং স্কয়ারের মাঝখানে বসবে ২৬.৬৭ (২৪ বসানো যাবেনা, কেননা ২৪ বসালে দুই উপাদানের প্রতিনিধিত্ব ১০০ ভাগ হবে না)
গমের ভূসি ও অটোকুড়ার আমিষের শতকরা হারের গড় মান = (১৪ + ১২)/২ = ১৩

সয়াবিন কেক ও সরিষার খৈলের আমিষের শতকরা হারের গড় মান = (৪০ + ৩০)/২ = ৩৫
সয়াবিন কেক + সরিষার খৈল মেশাতে হবে = ১৩ -২৬.৬৭ = ১৩.৬৭, ১৩.৬৭/২২ × ১০০ × ৯০ = ৫৫.৯২ গ্রাম
গমের ভূসি + অটোকুড়া মেশাতে হবে = ৩৫-২৬.৬৭ = ৮.৩৩, ৮.৩৩/২২ × ১০০ × ৯০ = ৩৪.০৮ গ্রাম

অতএব, সয়াবিন কেক মেশাতে হবে ৫৫.৯২/২ = ২৭.৯৬ গ্রাম
সয়াবিন কেক মেশাতে হবে ৫৫.৯২/২ = ২৭.৯৬ গ্রাম

অটোকুড়া মেশাতে হবে ৩৪.০৮/২ = ১৭.০৪ গ্রাম
গমের ভূসি মেশাতে হবে ৩৪.০৮/২ = ১৭.০৪ গ্রাম

পাঁচটি উপাদান মিলে মোট ১০০ গ্রাম। যদি এক কেজি খাদ্য তৈরি করা হয় তাহলে প্রতিটি মানকে ১০ দ্বারা গুণ করতে হবে। এখন দেখতে হবে এই ৫ টি উপাদানের আমিষের অবদানের যোগফল ৩০% আমিষ হয় কিনা।

ধরি, এক কেজি খাদ্য তৈরি করতে হবে -অর্থ্যাৎ ১০০০ গ্রাম খাদ্য উপাদান প্রয়োজনঃ
অতএব, ১০০ গ্রাম ফিশ মিল থেকে পাব = ৬০ গ্রাম আমিষ

২৭৯.৬ গ্রাম সয়াবিন কেক থেকে পাব = ১১১.৮৪ গ্রাম আমিষ
২৭৯.৬ গ্রাম সরিষার খৈল থেকে পাব = ৮৩.৮৮ গ্রাম আমিষ

১৭০.০৪ গ্রাম অটোকুড়া থেকে পাব = ২০.৪ গ্রাম আমিষ
১৭০.০৪ গ্রাম গমের ভূসি থেকে পাব = ২৩.৮ গ্রাম আমিষ
পাঁচটি উপাদানের আমিষের অবদানের যোগফল দাঁড়ায় = ২৯৯.৯ বা ৩০০ গ্রাম/১০০০ গ্রাম খাদ্য উপাদান অর্থ্যাৎ ৩০%

পদ্ধতি -৫

মনে করি, একজন মৎস্য চাষি/মৎস্য খাদ্য উৎপাদনকারী সরিষার খৈল এবং অটোকুড়া সহযোগে একটি খাদ্য তৈরি করতে চায় যার আমিষের হার হবে ৩০%। সাথে সে বাইন্ডার হিসেবে ৫% আটা ও ১% খনিজ লবণ মেশাতে চায়। তাহলে তাকে কোন উপাদান কত অনুপাতে মেশাতে হবে। নিচের চিত্র টি ফলো (অনুসরণ) করুনঃ

সরিষার খৈল-আমিষ ৩৪%
অটো কুড়া-আমিষ ১২%

এ ক্ষেত্রে প্রথমে ৫% আটা এবং ১% খনিজ লবণের পরিমাণ ০৬ গ্রামকে মোট ওজন ১০০ গ্রাম থেকে বাদ দিয়ে নিতে হবে। অর্থ্যাৎ আমরা সরিষার খৈল ও অটোকুড়া থেকে সর্বোচ্চ ১০০-৬ = ৯৪ গ্রাম খাদ্য উপাদান নিতে পারব। এখানে আটা থেকে প্রাপ্ত সর্বোচ্চ ১ গ্রাম আমিষের পরিমাণকে উপেক্ষা করা যায়, আবার হিসাবে গণ্য করাও যায়। উপেক্ষা করলে হিসাব এক রকম হবে আর হিসাবে অন্তর্ভূক্ত করলে ফলাফল হবে অন্য রকম। প্রথমে আটার আমিষের পরিমাণ উপেক্ষা করে হিসাব বের করা যাক-

অর্থ্যাৎ ৯৪ গ্রাম খাদ্য উপাদান থেকে পেতে হবে ৩০ গ্রাম আমিষ
বা, ১০০ গ্রাম খাদ্য উপাদান থেকে পেতে হবে ৩০ গ্রাম আমিষ

সরিষার খৈল মেশাতে হবে = ১২-৩০ = ১৯.৯, ১৯.৯/(২২) × ১০০ × .৯৪=৮৫.০ গ্রাম
অটোকুড়া মেশাতে হবে = ৩৪-৩১.৯ = ২.১, ২.১/(২২) × ১০০× .৯৪ = ০৯.০ গ্রাম

তাহলে দেখা যাচ্ছে, সরিষার খৈল ও অটোকুড়া মিলে ১০০০ গ্রাম/এক কেজি খাদ্য তৈরি করতে হলে সরিষার খৈল মিশাতে হবে ৮৫ দ্ধ ১০ = ৮৫০ গ্রাম এবং অটোকুড়া মেশাতে হবে ৯ দ্ধ ১০ = ৯০ গ্রাম। দুই উপাদান মিলে হলো ৯৪০ গ্রাম এবং আটা ও খনিজ পদার্থ মিলে হবে ৬০ গ্রাম সব মিলে হবে ১০০০ গ্রাম/এক কেজি। এখন দেখতে হবে এই দুই উপাদান থেকে প্রাপ্ত আমিষের পরিমাণের যোগফল ৩০% হয় কিনা।

১০০ গ্রাম সরিষার খৈল থেকে পাওয়া যায় = ৩৪ গ্রাম আমিষ
৮৫০ গ্রাম সরিষার খৈল থেকে পাওয়া যায় = ২৮৯ গ্রাম আমিষ

আবার, ১০০ গ্রাম গমের ভূসি থেকে পাওয়া যায় = ১২ গ্রাম আমিষ
৯০ গ্রাম অটোকুড়া থেকে পাওয়া যায় = ১০.৮ গ্রাম আমিষ

অতএব, দুই উপাদান থেকে পাই ২৮৯ + ১০.৮ = ২৯৯.৮ গ্রাম আমিষ/১০০০ গ্রাম খাদ্য, অতএব, শতকরা হার হবে ৩০%
এভাবে পিয়ারসন্স স্কয়ারের মাধ্যমে যেকোন সংখ্যক উপাদান মিশিয়ে মাছের সুষম খাদ্য তৈরি করা সম্ভব।

আটার আমিষ, হিসাবে গণ্য করার ক্ষেত্রে ৯ গ্রাম আমিষ (৫০ গ্রাম আটা থেকে প্রাপ্ত) পূর্বে প্রাপ্তি দেখাতে হবে। অর্থ্যাৎ ৯৪ গ্রাম খাদ্য উপাদান থেকে আমাদের ৩০-৯ = ২১ গ্রাম আমিষ পাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে দেখা যাচ্ছে বাইন্ডার হিসেবে আটার ব্যবহারই লাভজনক। এক্ষেত্রে ভালো বাইণ্ডারও পাওয়া গেলো, আমিষও মিলল।

লেখকঃ মো: হাদিউজ্জামান, সিনিয়র উপজেলা ফিশারিজ অফিসার, তালা, সাতক্ষীরা।

তথ্যসূত্রঃ এগ্রিকালচার লারলিং