একই জমিতে পাঁচ ফসল চাষের পদ্ধতি উদ্ভাবন। বছরে দুই ফসল চাষে সাফলতার পরে এবার পাঁচ ফসল চাষের পদ্ধতি উদ্ভাবনে সফল হয়েছেন বিজ্ঞানিরা। কয়েক বছর গবেষণা ও মাঠপর্যায়ে পরিচর্যার পর ইতিমধ্যে কৃষি বিজ্ঞানীরা পাঁচ ফসলের সাফল্য দেখালেন।
যশোর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা এ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ পদ্ধতিতে চাষ করলে কৃষক এক দিকে যেমন লাভবান হবেন তেমনি নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে সক্ষম হবেন। দেশের অর্থনীতিতেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে তাদের এই সফলতা।
যশোর কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, এক বছর আগেও কৃষক জমিতে বছরে এক থেকে দুইটি ফসল উৎপাদন পেত। বিশেষ করে আমন ও বোরো ধান উৎপাদনের পর প্রায় বছরের অর্ধেক সময় খালি পড়ে থাকতো জমি। এতে কৃষকের ইচ্ছা থাকলেও চাষে লাভের মুখ দেখত না।
তাছাড়া গতানুগতিক নিয়মে চাষ করে কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম না পেয়ে চাষে প্রতিবছর লোকসান করায় চাষের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এসব দিক বিবেচনায় এনে কীভাবে কৃষককে লাভজনক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায় সে বিষয়ে গবেষণা শুরু হয় আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে। একই জমিতে বোরো, আমন ধান আবাদের সঙ্গে শাক-সবজি, মশুরি, ভ্ট্টুাসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করা হয়েছে।
কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. কাওসার আলী জানান, দেশের ফসলি জমি হ্রাস, জমির উর্বরতা রক্ষা, কৃষককে ফসল চাষে লাভজনক করে তুলতেই আমাদের এই গবেষণা। কৃষক এখন বছরে দুই মৌসুমের ধান আবাদের পাশাপাশি শাকসবজি, রবিশস্যসহ বিভিন্ন ফস চাষ করে বছরে এখন পাঁচটি ফসল ঘরে তুলতে পারছেন।
এসব শাক সবজি চাষে পূর্ণ মান বজায় রাখা হচ্ছে। এর ফলে কৃষক একদিকে যেমন একই জমিতে পাঁচ ধরনের ফসল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন, তেমনি মানসম্মত সবজি চাষ উৎপাদনে সক্ষম হচ্ছেন।
গবেষণা কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. গোবিন্দ্র চন্দ্র বলেন, দেশের মোট জনশক্তির ৪১ ভাগ কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। তাই মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কৃষির উন্নয়ন ছাড়া কোনো উপায় নেই। অথচ প্রতিবছর দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি, চাষযোগ্য জমি ও মৃত্তিকার উর্বরতা হ্রাসের পাশাপাশি জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের কারণে বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে।
এসব কারণ মাথায় রেখে যশোর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিকরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তারই ধারাবাহিকতায় শস্য বিন্যাসের মাধ্যমে এক জমিতে এক বছরে পাঁচ ফসল উৎপাদনের সফল গবেষণা সমাপ্ত হয়েছে।
কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে কর্মরত কয়েকজন কৃষক জানান, আমরা আগে জানতাম এক জমিতে দুই থেকে তিন ফসল করা সম্ভব। বিশেষ করে ধান আবাদের পর জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রাখা হতো। এখন বিজ্ঞানীদের এ গবেষণা সফল হওয়ায় আমরা এই পদ্ধতিতে ফসল চাষের কথা ভাবছি।
তথ্যসূত্রঃ আধুনিক কৃষি খামার