নাম মো: শামসুল আলম, পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক। টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের চাপড়ী গ্রামের বাসিন্দা তিনি। কর্মরত আছেন একই উপজেলার এসই পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কৃষি বিষয়ক সহকারী শিক্ষক হিসেবে। পাঠদানের বিষয় কৃষি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পুথিগত জ্ঞানের পাশাপাশি হাতে-কলমে শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে পাঁচ বছর আগে অনেকটা শখের বশেই গড়ে তোলেন ছোট্ট একটি ফলের বাগান।
ছোট্ট এই বাগান থেকেই তার স্বপ্নের যাত্রা শুরু। মাথায় চিন্তা আসে, কিভাবে ছোট্ট এই বাগানকে বাণিজ্যিকভাবে গড়ে তোলা যায়। পরবর্তীতে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে ৭ একর জমিতে গড়ে তোলেন ৭৮ প্রজাতির ফলজ গাছের সমন্বয়ে বিশাল এক বাগান। ৩২ টি বিদেশী ও ৪৬ টি দেশী প্রজাতির ফলের গাছের সমন্বয়ে গড়া এই বাগানটি বর্তমানে টাঙ্গাইলের সবচেয়ে অালোচিত ফলের বাগান। এখানকার যেসব ফল উৎপাদন হয় সেগুলোর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গুণটি হলো প্রতিটা ফল শতভাগ রাসায়নিকমুক্ত। এই গুণের কারণে এখানকার ফলের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা।
পেশায় শিক্ষক হলেও কৃষিকাজের প্রতি রয়েছে শামসুল ইসলামের প্রবল আগ্রহ ও অদম্য চেষ্টা। সে কারণেই প্রায় সাত লক্ষ টাকা ব্যয়ে নিজ প্রচেষ্টায় বৈজ্ঞানিকভাবে গড়ে তোলেন এই বিশাল ফলজ বাগান। তার বাগানে লাগানো উল্লেখযোগ্য ফল গাছগুলো হলো— লটকন, আম, মাল্টা, কমলা, জাম, লিচু, কলা, কাঁঠাল, আনারস, চেরিফল ইত্যাদি। এছাড়া বিদেশি ফলের মধ্যে সৌদি খেজুর, ভিয়েতনামি ওপি নারিকেল, ড্রাগন ফল, ত্বিন ফল , কালো আঙ্গুর, আপেল, রামবুটান, এগফ্রুট (সাউথ আফ্রিকা), ডুরিয়ান (মালয়েশিয়ার জাতীয় ফল), অ্যাভোকাডো, ম্যাংগোস্টিন, মিরাক্কেল, চায়না কমলা, চায়না লিচু, চায়না পেয়ারা, লকেট, সুদানি শরিফা, জাপটিকাবা, আলু বোখারা, পামফল, পামওয়েল, অ্যানোনিয়া, সাতকরা, ব্রনাই, কিং আম , ব্যানানা ম্যাঙ্গো, কিউজাই আম (থাইল্যান্ড), অ্যামেরিকান সুন্দরি আম।
তাছাড়া তিনি বারোমাসী ফল হিসেবে আম (চার জাত), বারোমাসি পেয়ারা, কাঁঠাল, আমড়া, কামরাঙ্গা, পেঁপে, কলা, লেবু, চেরিফলের চাষ করছেন। মিশ্র প্রকৃতির এই বাগানে আরো রয়েছে বিভিন্ন মশলা, ঔষধি, কাঠগাছ ও শৌখিন গাছ। তবে, এতসবের মাঝে লটকন, আম, আনারস ও মাল্টা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করাই শামসুল আলমের মুখ্য উদ্দেশ্য। টাঙ্গাইল জেলার কৃষি বিষয়ক কর্মকর্তারা নিয়মিত তার বাগান পরিদর্শন করছেন এবং যথেষ্ট তথ্য, পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করে যাচ্ছেন।
সুবিশাল এই ফলজ বাগানের খুটিনাটি ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জানতে কথা হয় শামসুল আলমের সাথে। বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তিনি জানান, ‘এ বছর বাণিজ্যিকভাবে ফল চাষে ব্যাপক সফল হয়েছেন। বাজারেও তার ফলের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। মূলত রাসায়নিকমুক্ত হওয়াতেই তার বাগানের ফলের কদর বেড়ে চলেছে। তবে সরকারিভাবে আরো সহযোগিতা পেলে দেশের বিভিন্ন স্থানে কেমিক্যালমুক্ত ফলের বিস্তার ঘটাতে পারবো।’
বাগানটি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শুরুতে যে উদ্দেশ্য ছিল সেটাও পূরণ হচ্ছে এখান থেকে। তার স্কুলের শিক্ষার্থীরা হাতে কলমে কৃষি বিষয়ক জ্ঞান আহরণ করতে পারছে। এছাড়া, এখানে প্রতিদিন প্রায় (৮-১০) জন শ্রমিক কাজ করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছেন। বাগানের সমস্যার বিষয়ে শিক্ষক শামছুল আলম বলেন, ‘প্রধান সমস্যা হলো সেচ সমস্যা। পাহাড়ি মাটি হওয়ায় মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা কম, তাই শুষ্ক মৌসুমে বেশি সেচ দিতে হয়। সাত একর জমি সেচের আওতায় আনার মতো আর্থিক সামর্থ্য আমার নেই। গত বছর সেচের অভাবে বাগানে অনেক ক্ষতি হয়েছে। অনেক গাছে আগের বছর ফল ধরলেও সেচের অভাবে এ বছর ফল ধরেনি। তাছাড়া কাঠবিড়ালী বাগানের ফল খেয়ে নষ্ট করে ফেলছে। এমনকি মুকুল ও ফুল ফোঁটা থেকে শুরু করে কোনো কোনো গাছের ফুল পর্যন্ত খেয়ে ফেলছে।’
দেশজুড়ে যখন বিষযুক্ত ফলের ছড়াছড়ি তখন শিক্ষক শামসুল আলমের এমন উদ্যোগ ও তার বাস্তবায়ন সত্যিই প্রশংসনীয়। সারাদেশে রাসায়নিকমুক্ত ফল সরবরাহের জন্য এমন উদ্যোগ প্রতিটি জেলায় জেলায় হওয়া জরুরী। তাহলেই কমে যাবে বিষযুক্ত ফলের সমারোহ, বাড়বে ফরমালিনমুক্ত সুস্থ সতেজ ফল। ছোট্ট ছোট্ট এই কাজগুলোর মাধ্যমেই এগিয়ে যাবে দেশ, এগিয়ে যাবে জাতি।
তথ্যসূত্রঃ এগ্রি ভিউ