করলার অধিক ফলন পেতে চাষ করুন এই নিয়মে

বাংলাদেশ সহ বিশ্বের প্রায় অনেক দেশেই অধিক জনপ্রিয় হোল করলা। করলা বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সবজি। স্বাদে তিক্ত হলেও সকলের নিকট এটি প্রিয় সবজি হিসেবে পরিচিত। আর সঠিক পদ্ধতিতে করলা চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।

 

তাই করলা চাষে অধিক ফলন পেতে হলে আমাদের সঠিক পদ্ধতি জানতে হবে।

 

মাটি : জল জমেনা এ ধরনের প্রায় সব রকমের মাটিতেই করলার চাষ করা যায়। তবে জৈব পদার্থযুক্ত দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি করলা চাষের জন্য বেশি উপযোগী।

 

জলবায়ু : বাংলাদেশের আবহাওয়া করলা চাষের জন্য উপযোগী। উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় করলা ভালো জন্মে। তবে ফুল আসার সময় অত্যাধিক বৃষ্টিপাতে ফল ধরা ব্যাহত হয়।

 

জাত : বাংলাদেশে করলার বেশ কয়েকটি উচ্চফলনশীল জাত রয়েছে। এসব জাতের মধ্যে বারি করলা-১ এবং বিএডিসির গজ করলা উল্লেখযোগ্য। এছাড়া রয়েছে আরো কয়েকরকমের হাইব্রিড জাত। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট কৃর্তক উদ্ভাবিত বারি করলা-১ একটি উচ্চফলনশীল জাত। এ জাতের একটি গাছে ২০-৩০টি করলা ধরে। হেক্টরপ্রতি ফলন প্রায় ৩০ টন। বিএডিসির গজ করলা নামের রয়েছে একটি উচ্চফলনশীল করলার জাত। এ জাতের একটি গাছে ১৫-২০টি ফল ধরে। হেক্টরপ্রতি ফলন প্রায় ২৫ টন। এসব ছাড়াও করলার আছে বেশ কয়েকটি হাইব্রিড জাত। যেমন : বুলবুলি, টিয়া, প্যারট, কাকলি, তাজ-৮৮, গ্রিনস্টার, গৌরব, প্রাইড-১, প্রাইড-২, গ্রিন রকেট, হীরক, মানিক, জয়, রাজা, প্রাচী ইত্যাদি।

 

জীবন কাল: মোট জীবনকাল প্রায় চার থেকে সারে চার মাস। তবে জাত ও আবহাওয়াভেদে কোন কোন সময় কম বেশী হতে পারে।

 

উৎপাদন মৌসুম: ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে যে কোন সময় করলার বীজ বোনা যেতে পারে। কেউ কেউ জানুয়ারী মাসেও বীজ বুনে থাকেন কিন্তু এ সময় তাপমাত্রা কম থাকায় গাছ দ্র্বত বাড়তে পারে না, ফলে আগাম ফসল উৎপাদনে তেমন সুবিধা হয় না।

 

বীজের হার: করলা ও উচ্ছের জন্য হেক্টর প্রতি যথাক্রমে ৬-৭.৫ও ৩-৩.৫ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।

 

জমি তৈরী ও বপন: উচ্ছে ও করলার বীজ সরাসরি মাদায় (৪০x৪০x৪০ সে.মি) বোনা যেতে পারে। এৰেত্রে প্রতি মাদায় কমপক্ষে ২টি বীজ বপন অথবা পলিব্যাগে উৎপাদিত ১৫-২০ দিন বয়সের চারা রোপণ করতে হবে। উচ্ছের ক্ষেত্রে সারিতে ১.০ মিটার এবং করলার জন্য ১.৫ মিটার দূরত্বের মাদা তৈরী করতে হবে। মাদা বীজ বুনতে বা চারা রোপণ করতে হলে অন্তত: ১০ দিন আগে মাদা নির্ধারিত সার প্রয়োগ করে তৈরী করে নিতে হবে।

 

সার ব্যবস্থাপনা: বাংলাদেশের সব অঞ্চলের জন্য মাটি পরীক্ষা সাপেক্ষে সারের মাত্রা সুপারিশ করা হয় নাই। কাজেই যে সব অঞ্চলের জন্য সারের মাত্রা নির্দিষ্ট নেই সেসব অঞ্চলের জন্য পরীক্ষা মূলক প্রমানের ভিত্তিতে নিম্নোক্ত হারে সারের মাত্রা সুপারিশ করা হলো।

 

সারের নাম মোট সারের পরিমাণ জমি ও মাদা তৈরির সময় দেয়

হেক্টরে শতাংশে হেক্টরে শতাংশে
পঁচা গোবর ১০ টন ৮০ কেজি সব ৪০ কেজি
ইউরিয়া ১৫০ কেজি ৭০০ গ্রাম

 

টিএসপি ১৭৫ কেজি ৭০০ গ্রাম সব ৩৫০ গ্রাম
এমওপি ১৫০ কেজি ৬০০ গ্রাম ৫০ কেজি ২০০ গ্রাম
জিপসাম ৭০ কেজি ৪০০ গ্রাম সব ৪০০ গ্রাম

 

জিংক অক্সইড ১০কেজি ৫০ গ্রাম সব ৫০ গ্রাম
বোরাক্স ৮ কেজি ৪০ গ্রাম – ৪০ গ্রাম
ম্যাগনোসিয়াম অক্সাইড ১০ কেজি ৫০ গ্রাম

 

সারের নাম চারা রোপনের ২০ দিন পর চারা রোপনের ৪০ দিন পর চারা রোপনের ৬০ দিন পর
হেক্টারে শতাংশে হেক্টারে শতাংশে হেক্টারে শতাংশে

 

ইউরিয়া ৫০ কেজি ১০ গ্রাম ৫০ কেজি ১০ গ্রাম ৫০ কেজি ১০ গ্রাম
এমওপি ৪০ কেজি ২০ গ্রাম ৩০ কেজি ১০ গ্রাম ৩০ কেজি

 

ফসল সংগ্রহ: চারা গজানোর ৪৫-৪৫ দিন পর উচ্ছের গাছ ফল দিতে থাকে। করলার বেলায় প্রায় ২ মাস লেগে যায়। স্ত্রীফুলের পরাগায়নের ১৫-২০ দিনের মধ্যে ফল খাওয়ার উপযুক্ত হয়। ফল আহরণ একবার শুরু হলে তা দুমাস পর্যন্ত অব্যাহত থাকে ফলন। উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে উচ্ছে ও করলার হেক্টর প্রতি ফলন যথাক্রমে ৭-১০ টন (৩০-৪০ কেজি/শতাংশ) এবং ২০-২৫ টন (৮০-১০০ কেজি/শতাংশ) পাওয়া যায়।

 

তথ্যসূত্রঃ  যেভাবে করলা চাষে অধিক ফলন পাবেন শিরোনামে লেখাটি কৃষি তথ্য সার্ভিস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।