এক জমিতে এক সাথে ৪ থেকে ৬ টি সাথী ফসল চাষ

এক জমিতে এক ফসলের চাষ হয়। ধানের সময় ধান, পাটের সময় পাট চাষ। এটাই কৃষি ফসল ফলানোর আদি নিয়ম। এক জমিতে এক সাথে দু-তিন ফসল এটাও স্বাভাবিক। তবে টাঙ্গাইলের মধুপুর গড় এলাকায় এক সাথে এক জমিতে এক সাথে ৪ থেকে ৬টি সাথী ফসল চাষ করছে স্থানীয় কৃষকরা। ফলে কৃষিতে এক নতুন সম্ভাবনার দেখা পেয়েছে মধুপুর গড় এলাকার প্রান্তিক কৃষকরা।

 

মধুপুর গড় এলাকার পিরোজপুর, সাইনামারী, পীরগাছা, ধরাটি গ্রামের কৃষকরা জানান, কৃষি জমির পরিমাণ দিনদিন কম যাচ্ছে। পারিবারিকভাবে জমি বন্টনে বাপ দাদার ওয়ারিশ হিসেবে ভাগে জমি কমে যাচ্ছে। কিভাবে অল্প খরচে, অল্প জমিতে, অল্প সময়ে অধিক ফসল পাওয়া যাবে এ চিন্তা থেকে গড় এলাকার কৃষকরা এক সাথে এক জমিতে ২-৬টি পর্যন্ত সাথী ফসল চাষে ঝুঁকেছে।

 

কৃষকরা জানান, বন্যার পানি উঠে না এমন উচু জমিতে এ চাষ পদ্ধতি করা সম্ভব। বন্যামুক্ত উচু উর্বর মাটিতে এ পদ্ধতিতে চাষ করলে কৃষকরা সফল হবে।

 

মধুপুর গড় এলাকার পিরোজপুর, চাপাইদ, অরণখোলা, সাইনামারী, ভুটিয়া, মমিনপুর, ধরাটি, পীরগাছা, ফুলবাগচালা, কালিয়াকুড়ি, শোলাকুড়ি, কাকড়াগুনি, জয়নাগাছা, চুনিয়া, বেদুরিয়া, গায়রা, টেলকি, হরিণধরা, আমলিতলা, বেরীবাইদ, মাগন্তীনগরসহ বিভিন্ন গ্রামে এ পদ্ধতির চাষ দেখা যায়। মধুপুর গড় এলাকার মাটি আনারস, কলা, পেঁপে, আদা, কচু, হলুদসহ নানা কৃষি ফসল চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী।

 

আনারস চাষের সাথে সাথী ফসল চাষের পদ্ধতি বেশি প্রয়োগ করা হচ্ছে।উপজেলার কুড়াগাছা ইউনিয়নের পিরোজপুর গ্রামের আজিজুল হক জানান, তার মূল ফসল ১২ মাসী লেবু। লেবুর সাথে আর কি ফসল ভালো হয় এ জন্য তিনি আনারস লাগান। আনারসের সাথে অল্প সময়ে আর কি চাষ করা যায় এ জন্য তিনি ১ বছরের ফসল পেঁপে লাগান। সাথে ৬ মাসের ফসল আদা ও কচু লাগান। সাথে পাতলা করে কিছু কলা গাছ লাগান।

 

তারপর নিজের খাওয়ার জন্য কিছু মরিচ লাগান। তার মতে মরিচ নিজেদের খাওয়ার পর সামান্য বিক্রি করেছে। ৬ মাসে আদা কচু তুলে বিক্রি করেছেন। এক বছরের মধ্যে পেঁপে বিক্রি শেষ হবে। ২-৩ বছরের মধ্যে আনারস বিক্রিও শেষ হবে। শেষে থাকবে মূল ফসল লেবু।

 

এই গ্রামের আরেক কৃষক এছাক আলী তার বাড়ির পেছনের জমিতে এক বিঘা জমিতে সাজিয়েছেন ৪ ফসলের বাগান। এক সাথে লাগিয়েছেন পেঁপে মরিচ আদা ও লেবু। অপর কৃষক আবু সাইদ তার ৪৫ শতাংশ জমিতে একই ভাবে লাগিয়েছেন কলা, পেঁপে, আদা, কচু, ডাটা ও পুঁইশাক লাগিয়েছিলেন। এভাবে মধুপুর গড় এলাকায় একই পদ্ধতিতে অনেক কৃষক ফসল চাষে ঝুঁকেছেন।

 

কৃষকদের উৎপাদিত কাঁচামাল বিক্রির জন্য রয়েছে জলছত্র কাঁচামালের বাজার। এই বাজারে সারা বছর কৃষি পণ্য ক্রয় বিক্রয় হয়। সারা দেশের সাথে ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল থাকার কারণে সহজেই সড়ক পথে কৃষি পণ্য দেশের নানা জেলায় পরিবহন করা যায়। এ জন্য ক্রেতারও কোনো অভাব নেই। আবার বাগান থেকেও পাইকাররা কৃষকদের উৎপাদিত কাঁচামাল কিনে থাকেন। বাগান থেকে গাড়ি ভর্তি করে কৃষি ফসল রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সমাগম হয়।

 

এ ব্যাপারে মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, “শুধু আনারস চাষে কৃষকদের লাভ কম হতো। কৃষকদের পরামর্শ ও সহযোগীতা দিয়ে সাথী ফসল চাষে উৎসাহিত করছি। কৃষকরা এখন আনারস বাগানে এক সাথে মাল্টা, আদা, পেঁপে, কচু, হলুদ, লেবু, মরিচসহ নানা কৃষি ফসল চাষ করছে। এটা একটা ইতিবাচক মিশ্র ফসল চাষ পদ্ধতি। এ পদ্ধতির চাষের ফলে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে।”

তথ্যসূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন