শিরোনাম পরে হয়তো সবাই অবাক হচ্ছেন, কিন্তু এটাই বাস্তব। পুকুরে গলদা চিংড়ি চাষ করে সোহাগের আয় ৩ লাখ টাকা। মাছ ধরতে জেলেরা নেমেছেন পুকুরে। মাছ দেখতে পাড়ে ধীরে ধীরে উৎসুক জনতার ভিড় বাড়তে থাকে। জেলেরা জাল টেনে পুকুরের কিনারায় আসতেই সবাই অবাক। গলদা চিংড়ি, তাও আবার মিঠা পানিতে! সবার মাঝে শোরগোল পড়ে যায়।
শনিবার (২৪ অক্টোবর) সকালে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরপুর-দূর্গাপুর ইউনিয়নের মহাদেবপুর গ্রামে সোহাগ মৎস খামারে গলদা চিংড়ি ধরাকে কেন্দ্র করে এমনই এক উৎসব মুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। মাছ দেখতে ও কিনতে স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি শহর থেকেও লোকজন এসেছিল। সেদিন খামার থেকেই প্রায় ৫০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি হয়ে যায়। উল্লেখ্য জেলায় এই প্রথম গলদা চিংড়ির চাষ হয়েছে।
সোহাগ মৎস্য খামারের ৬৬ শতাংশ জলকরে গলদা চিংড়ি ও কার্প জাতীয় মাছ চাষ করে মাত্র ৭ মাসেই অভাবনীয় সফলতার আশা করছেন মৎস্যচাষি সোহাগ। স্থানীয় লোকজনের চাওয়া পূরণ করতে গত শনিবার জাল টেনে অল্প পরিমাণে গলদা চিংড়ি, রুই-কাতলা ও সিলভার কার্প ধরা হয়। মাছগুলো আশানুরুপ বৃদ্ধি পেয়েছে। উপযুক্ত দাম পেলে প্রায় ৩ লাখ টাকা আয় হবে বলে ধারণা করছেন চাষি সোহাগ কুমার বিশ্বাস।
সোহাগ কুমার বিশ্বাস জানান, তার বাবা স্বপন কুমার বিশ্বাস ৪ বছর ধরে পুকুরে কার্প জাতীয় মাছ চাষ করে আসছিলেন। সেই সূত্রে নিজেকে একজন সফল মৎস্য উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতেন। স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষিতে অনার্স শেষ করলেও ইন্টার্ন করেন মৎস্য চাষের উপর। ২০১৮ সালে মংলায় গাজী ফিস ফার্ম থেকে সফলতার সাথে ইন্টার্ন শেষে গ্রামে ফিরে এসে বাবার সাথে মাছ চাষ শুরু করেন তিনি।
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ প্রথমে করে পাবদা ও গুলশা মাছের চাষ করেন তিনি। কার্প জাতীয় মাছের তুলনায় এ জাতীয় মাছ চাষে অধিক মুনাফাও পেয়েছেন। এ বছর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সাইদুর রহমান রেজার পরামর্শে ৬৬ শতাংশ পুকুরে গলদা চিংড়ির সাথে রুই-কাতলা ও সিলভারকার্প মাছের চাষ করেন।
সোহাগ জানান, চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে ৬৬ শতাংশের একটি পুকুরে বাগেরহাটের একটি মৎ্যি খামার থেকে পিএল সাইজের (১০০টিতে কেজি) ৩২’শ পিস গলদা চিংড়ি এবং ৩ হাজার পিস কার্প জাতীয় মাছ ছাড়া হয়। প্রতিটি গলদা চিংড়ি ১৮ টাকা দরে কেনা হয়।
সোহাগ বলেন, পুকুর প্রস্তুতকরণ, মাছের খাবার, প্রোবায়োটিক ও শ্রমিক খরচ বাবদ ৭ মাসে তার প্রায় ৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সময় মতো খাবার ও সঠিক পরিচর্যা করায় মাছের ওজনও ভালো এসেছে। ৬৬ শতাংশ এই পুকুর থেকে সাড়ে ৩’শ কেজি চিংড়ি ও ১হাজার কেজি কার্প জাতীয় মাছ পাওয়া যাবে। সব ঠিকঠাক থাকলে চিংড়ি থেকে কমপক্ষে ৩ লাখ টাকা ও কার্প জাতীয় মাছ থেকে আরও ৩ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করা যাবে। খরচ বাদে সব মিলিয়ে কমপক্ষে ৩ লাখ টাকা নীট মুনাফা পাবেন বলে ধারণা করছেন সোহাগ।
খাবার ব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা হলে সোহাগ জানান, তিনি প্রতিদিন সকাল ১০টা ও সন্ধ্যা ৭টায় চিংড়ির ফিড ও বিকাল ৪টার সময় ভাসমান ফিড দিতেন। মাছের ওজন অনুযায়ী খাবার দিতে হয়। প্রতি ১’শ কেজি মাছের ওজনে দিনে ৩ থেকে ৪ কেজি ফিড দিতে হয়।
এছাড়া অক্সিজেনের স্বল্পতা দেখা দিলে এ্যারেটর ব্যবহার করে অক্সিজেনের যোগান দিতে হয়। গলদা চিংড়িতে তেমন কোনো রোগবালাই দেখা যায়নি বলে তিনি জানান।
মাছের বাজারজাত করণ নিয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় ভাবে গলদা চিংড়ির বাজার ওইভাবে গড়ে উঠেনি। তাই তার মৎস্য খামারে উৎপাদিত গলদা চিংড়ি বিক্রির জন্য সাতক্ষীরা চুকনগরে এক মৎস্য ব্যবসায়ীর সাথে যোগাযোগ হয়েছে। তিনি প্রতি কেজি চিংড়ি ১ হাজার থেকে ১২’শ টাকা দর দিতে চেয়েছেন। অল্প কয়েকদিনের মধ্যে সব মাছ ধরা হবে। অন্যদিকে, রুই-কাতলা ও সিলভার কার্প মাছ স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হবে।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সাইদুর রহমান রেজা বলেন, “কালীগঞ্জের মাটি, পানি ও আবহাওয়া গলদা চিংড়ি চাষের উপযোগী। গলদা চিংড়ি চাষ লাভজনক হওয়ায় উপজেলার মৎস্য চাষিদের চিংড়ি চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। কেউ চিংড়ি চাষে এগিয়ে আসলে উপজেলা মৎ্যে অফিস তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা করবে।”
তথ্যসূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন