তিন বিঘা জমির লাউ বিক্রি করে লাখপতি রফিকুল

জাত্রা তা তেমন কঠিন নয়। শুধু জানতে হবে সঠিক নিয়ম। তিন বিঘা জমি থেকে প্রায় ৮ লাখ টাকার লাউ বিক্রি করতে পারবেন রফিকুল ইসলাম। উৎপাদন ব্যয় বাদে সাড়ে ৬ লাখ টাকা লাভ থাকবে বলে আশা করছেন তিনি।

 

সবুজ ক্ষেতজুড়ে শুধু লাউ আর লাউ। মাচার উপরে গাছ আর তার নিচে ঝুলছে হাজার হাজার লাউ। দেখলে যেন চোখ জুড়িয়ে যায়। এই লাউয়ের আবাদ করে লাখপতি বনে গেছেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার শাহাপুর-ঘিঘাটি গ্রামের রফিকুল ইসলাম নামের এক চাষি।

 

লাউচাষি রফিকুল ইসলাম জানান, লেখাপড়া শেষে তিনি ঢাকায় চাকরি করতেন। পরে চাকরি ছেড়ে বেশ কয়েক বছর বিদেশেও ছিলেন। সেখানকার উপার্জিত অর্থ দিয়ে তিনি গ্রামে বেশ কিছু জমি ক্রয় করেন। এরপর বিদেশ থেকে ফিরে এসে আর কোনো চাকরি না খুঁজে কৃষি কাজে মনোনিবেশ করেন। সেই থেকে তার চাষাবাদ শুরু। বিগত ১৫-১৬ বছর যাবৎ তিনি কৃষি কাজের সাথে জড়িত রয়েছেন।

 

রফিকুল ইসলাম তার বাড়ি পাশের তিন বিঘা জমিতে গত ভাদ্র মাসে লাউয়ের আবাদ শুরু করেন। জমি তৈরি, সার, সেচ, কীটনাশক, মাচা তৈরি, পরিচর্যাসহ অন্যান্য খাতে তার বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা।

 

তিনি জানান, গাছ লাগানোর ১২০ দিনের মাথায় লাউ পাওয়া যায়। তিনি লাল তীর কোম্পানির ডায়না জাতের লাউয়ের আবাদ করেছেন। প্রতিবিঘা জমিতে থেকে তিনি ২ লক্ষাধিক টাকার লাউ বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। সে হিসেবে চাষি রফিকুল ইসলাম তিন বিঘা জমি থেকে প্রায় ৮ লাখ টাকার লাউ বিক্রি করতে পারবেন। উৎপাদন ব্যয় বাদে তার সাড়ে ৬ লাখ টাকা লাভ হবে বলে আশা করছেন তিনি।

 

রফিকুল ইসলাম জানান, স্থানীয় বাজারে লাউয়ের দাম কম। কিন্তু ঢাকার বাজারে লাউয়ের দাম বেশি। স্থানীয় বাজারে একটি লাউ ২০ থেকে ৩০ টাকা ও ঢাকার বাজারে ৪০ থেকে ৫০ টাকা একটি লাউ বিক্রি হয়ে থাকে। এ জন্য তিনি ঢাকার কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী, বাইপাইলসহ অন্যান্য স্থানে লাউ বিক্রি করেন। তার বাড়ি সামনে ট্রাক এসে লাউ নিয়ে যায়।

 

তিনি বলেন, “আমি চাকরি-ব্যবসা সবকিছুই করেছি। কিন্তু কৃষিকাজে আমি গর্ববোধ করি। যার কারণে গত ১৫ বছর ধরে কৃষিকাজই করছি। এই কাজে আমি যেমন স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি তেমনই আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছি।”

 

কৃষি কাজে তার শিক্ষিকা স্ত্রীও উৎসাহিত করেন বলে জানান রফিকুল। ত্রিলোচনপুর ইউপি’র উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম বলেন, “রফিকুল ইসলাম একজন বড় চাষি। তিনি লাউ ছাড়াও বেগুন, টমেটোসহ অন্যান্য সবজীর আবাদ করেন। আমরা কৃষি বিভাগ থেকে তাকে জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদ, উন্নতি প্রযুক্তি ব্যবহারসহ যাবতীয় কৃষি পরামর্শ দিয়ে আসছি।

 

বর্তমানে তিনি তার ক্ষেতের লাউ ঢাকায় পাঠাচ্ছেন। কৃষি বিভাগ থেকে তাকে সার, বীজ ও প্রদর্শনী প্লট দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে। তিনি এখন এলাকার মডেল কৃষককে পরিণত হয়েছেন।”

তথ্যসূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন