৩২ শতাংশ পুকুরে শিং চাষে ৫ মাসে লাভ ১১ লাখ টাকা!বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত প্রযুক্তিতে পুকুরে শিং মাছের নিবিড় চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করে ওই চাষি ৩২ শতাংশ পুকুরে পাঁচ মাসে খরচ বাদে আয় করেছেন ১১ লক্ষ টাকা।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) গবেষণালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে উদ্ভাবিত প্রযুক্তিতে পুকুরে শিং মাছের নিবিড় চাষে এক নবদিগন্ত সৃষ্টি হয়েছে। ময়মনসিংহ সদরের মাঝিহাটি গ্রামের আবু রায়হান নামের এক খামারি বিএফআরআইয়ের এ নতুন পদ্ধতি অনুসরণ করে ৫ মাসে ৩২ শতাংশের পুকুর থেকে খরচ বাদে আয় করেছেন ১১ লক্ষ টাকা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) এর মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ জানান, বাংলাদেশে শিং অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি মাছ। এই মাছে ফ্যাটের পরিমাণ কম এবং প্রচুর পরিমাণে উচ্চমানের সহজপাচ্য আমিষ থাকায় সবার কাছে এ মাছের চাহিদা রয়েছে। রুইজাতীয় মাছের চেয়ে এদের বাজার মূল্য অনেক বেশি। বিএফআরআই এর গবেষণালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে নিবিড় পদ্ধতিতে শিং মাছ চাষ করা হলে মৎস্য খাতে এক নতুন মাত্রা সংযোজন হবে। এ প্রযুক্তি এখন দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে হবে। ফলশ্রুতিতে দেশের মানুষের কাছে শিং মাছ আয়ের সহজলভ্য হবে পাশাপাশি চাষিরাও আর্থিক লাভবান হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
শিং চাষী আবু রায়হান এর সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি শুরু থেকেই ইনস্টিটিউটের নিবিড় পদ্ধতিতে শিং মাছের চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন। তিনি বলেন, আমি ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ ও পরামর্শ গ্রহণ করেছি। পুকুরের ও মাছের নিয়মিত পরিচর্যা ও যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি মাছের জন্য নিয়মিত সুষম খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করেছি। এ ছাড়াও যে বিষয়গুলো খেয়াল রেখেছি তা হলো, পুকুরে একই আকারের শিং মাছের পোনা মজুদ করা, বিশেষ করে স্ত্রী পোনা মজুদ করা, অধিক ঘনত্বে পোনা মজুদ করা, নিয়মিত চুন ও লবণ প্রয়োগ করা। তাছাড়া, নিয়মিত পানি পরিবর্তন করা হয়েছে ও পুকুরের গভীরতা তুলনামূলক বেশি রাখা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিএফআরআইয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এইচ এম কোহিনুর বলেন, সাধারণত মৎস্য চাষিরা আধানিবিড় পদ্ধতিতে শিং মাছ চাষ করে থাকেন। বিএফআরআই এর গবেষণায় দেখা গেছে, পুকুরে সহজেই শিং মাছের নিবিড় চাষ করা সম্ভব। বর্তমানে চাষকৃত অন্যান্য মাছের তুলনায় উচ্চ মূল্যের শিং মাছের নিবিড় চাষ অধিক লাভজনক। এ ধরণের চাষবাদের ক্ষেত্রে পুকুরকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে যাতে পুকুরের পানি কোনোভাবেই নষ্ট না হয়।
এ ক্ষেত্রে সপ্তাহে ৪-৫ দিন বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হয়। ক্ষতিকর জলজ প্রাণির প্রবেশ রোধে পুকুরের চারপাশে ফিল্টার জাল দিয়ে বেস্টনী দেওয়া যেতে পারে। খামারে চাষকালীন মাছ রোগাক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি এড়াতে পুকুরের জৈব নিরাপত্তা ও রোগ প্রতিরোধী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। সাধারণত পোনা মজুদের ছয় থেকে সাত মাস পর মাছ আহরণ করতে হয়। এ সময়ে মাছের গড় ওজন ৫৫-৬৫ গ্রাম ওজনের হয়ে থাকে। পুকুর পুরোপরি শুকিয়ে শিং মাছ আহরণের ব্যবস্থা করতে হবে। এ পদ্ধতি অনুসরণে ৫০ শতাংশের পুকুর হতে সাত মাসে ৮-৯ টন শিং মাছ উৎপাদন করা যায়।
তথ্যসূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন