বাড়ির ছাদে নাগপুরী কমলার চাষ

কমলা মুলত শীতকালীন ফল হিসাবে পরিচিত হলেও বর্তমানে এই ফল সারা বছরই পাওয়া যায়।ভিটামিন-সিতে ভরপুর একটি মজাদার ফল কমলা। ছোট বড় সকলেই এই কমলা খেতে খুব পছন্দ করেন।
কমলার অনেক জাত রয়েছে এর মধ্যে একটি হল নাগপুরী কমলা। এটি মূলতঃ ভারতের মহারাষ্ট্রে নাগপুরে চাষ করা হয়। নাগপুরী কমলার জনপ্রিয়তার জন্য নাগপুরকে কমলার শহর হিসেবেই সবাই চিনে। বর্তমান এ এই কমলার চাষ শুধুমাত্র নাগপুরেই সীমাবদ্ধ নেই‌ বরং আমাদের দেশেও চাষ হচ্ছে। ছাদবাগানীদের জন্য আনন্দের স্ংবাদ হল নাগপুরী কমলা আপনার বাসার ছাদে ও চাষ করতে পারবেন।

নাগপুরী কমলা খেতে খুবই সুস্বাদু ও মিষ্টি হয়। এর কোষগুলো রসালো হয়। নাগপুরী কমলার কুঁড়ি বর্ষাকালে আসে। সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত টকস্বাদের ফল পাওয়া যায়। মিস্টি ফল পেতে হলে জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। বছরে দুইবার করে ফল দেয় নাগপুরী কমলা।

ছাদবাগানে চাষের পদ্ধতি
টবে অথবা ড্রামে নাগপুরী কমলা চাষ করা যায়। এক্ষেত্রে,

ক) নূন্যতম ১৮”/১৮” ইঞ্চি আকারের টব অথবা ড্রাম নিতে হবে। কারন এর থেকে ছোট আকৃতি হলে কমলা চাষ করা সম্ভব নয়।

খ) মাটি প্রস্তুতিতে নিম্নোক্ত সারগুলো মাটিতে মিশিয়ে নিতে হবে।

গোবর/কম্পোস্ট সার – ১০ কেজি।
ইউরিয়া – ১৫০ গ্রাম

টিএসপি – ১০০গ্রাম
এমওপি – ১০গ্রাম

জিংক সালফেট – ১০গ্রাম
বোরিক এসিড – ৫গ্রাম

গ) সারগুলোকে মাটিতে ভালভাবে মিশিয়ে ১০/১৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে। এরপর চারা রোপণ করুন।

ঘ) গাছের বৃদ্ধি সঠিক ভাবে রাখতে হলে প্রতিমাসে অন্তত একবার করে এনপিকে(NPK) বা মিশ্র সার,৫০০গ্রাম গোবর, ২ লিটার পানিতে গুলিয়ে গাছের গোড়া থেকে ৫/৬ ইঞ্চি দূরে প্রয়োগ করতে হবে।

ঙ) ভাল ফলন পেতে চাইলে গাছ কেটে ছোট ছোট করে ছেঁটে রাখতে হবে।যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে সূর্যের আলো গাছে প্রবেশ করে। ১ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত গাছের ডাল ছাঁটাই করতে হবে। ছাঁটাই করা ডালের কাটা অংশে বোর্দো পেস্টের প্রলেপ লাগিয়ে নিন। এছাড়াও অনিয়ত আকৃতির ফল গুলো কেটে বাদ দিয়ে প্রতিটি ফলের গুচ্ছে‌ ২/৩ টি সুস্থ সবল ফল রাখতে হবে।

পোকামাকড় দমন ও রোগবালাইর চিকিৎসা পদ্ধতি

১. লিফমাইনার পোকা দমন

এটি গাছের প্রধান শত্রু। এটি গাছের কচি ও সবুজ পাতা খেয়ে ফেলে।ফুটো তৈরি করে। এ পোকা দমনে-

ক) হলুদ ফাঁদ তৈরি করে দমন করা সম্ভব।

খ) খুব বেশি আক্রমণ করলে কিনালাক্স ২ মিলিগ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ১৫ দিন পর পর ব্যবহার করতে হবে।

২. ডাম্পিং অফ রোগের চিকিৎসা

এটি বর্ষাকালে বেশি হয়। এ রোগের ফলে গাছ এর গোড়া পচে যায়। এক্ষেত্রে রোজমিন্ড গোল্ড ২ গ্রাম ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় স্প্রে করতে হবে।

৩. গেমোসিস রোগের চিকিৎসা

এই রোগ গাছের কান্ড ও পাতাকে বাদামী করে ফেলে। কান্ড মাঝ বরাবর ফেটে যায় ও আক্রান্ত স্থান হতে কষ ঝরে। এক্ষেত্রে আক্রান্ত ডাল কেটে কাটা স্থানে বোর্দো পেস্ট লাগিয়ে নিন। বোর্দো পেস্ট তৈরি করতে হলে ১৪০ গ্রাম চুন ও ৭০ গ্রাম তুতে আলাদা আলাদা পাত্রে নিয়ে পরবর্তীতে ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে নিন।

ছাদে নাগপুরী কমলা চাষ করা খুবই সহজ ও আনন্দদায়ক। আপনি যদি কমলাপ্রেমী হয়ে থাকেন তবে ছাদে অন্যান্য ফলের চাষের পাশাপাশি অবশ্যই নাগপুরী কমলা চাষ করবেন।