কলা অতি পরিচিত ও জনপ্রিয় ফল। কলা পৃথিবীর সব দেশে হয় এবং সারা বছর ফসল পাওয়া যায়। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সব স্থানে কলা অন্যতম প্রধান ফসল হিসাবে বিবেচিত। এটি অতি খাদ্যমান সমৃদ্ব জনপ্রিয়, সস্তা ও সুস্বাদু ফল। বাংলাদেশে প্রায় ৪০ হাজার ha জমিতে কলা চাষ হয় এবং উক্ত জমি থেকে ফলের পরিমান প্রায় ৭ লক্ষ মেট্টিক টন, যা বাংলাদেশে মোট উৎপাদিত ফলের প্রায় ৪২ শতাংশ। দেশে ফল উৎপাদনের দিক থেকে বিবেচনা করলে কলার স্থান প্রথম কিন্তু উৎপাদনের জমির পরিমান বিবেচনা করলে এর স্থান দ্বিতীয়। বিশ্বে ফল বানিজ্যে কলার স্থান দ্বিতীয় (লেবুজাতীয় ফলের পরে কলার স্থান)। বাংলাদেশের কৃষক কলা চাষ করতে যেসব রোগ ও পোকার কারনে বাধার মুখমখি হচ্ছেন তার প্রধান দিকগুলি ও তার সমাধান আলোচনা করা হল। বাংলাদেশে যে সব কারনে কলা চাষ ক্ষতিগ্রস্থ হয় তার মধ্যে শতকরা ৮০-৯০ শতাংশ ক্ষতি হয় পানামা ও সিগাটোগা রোগ এবং পাতা ও ফল বিটল দ্বারা। তাই কলা বাগানের যত্নআত্তি ক্রার জন্য নিম্মে কলার উল্লেখিত রোগ ও পোকা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো ঃ
পানামা (Panama)
এই রোগ কলার চাষীর জন্য মারাক্তক সমস্যা কারন এ রোগের কারনে কলার উৎপাদন শুন্যের কাছাকাছি আসতে পারে। এ রোগ (Esarium oxysporum cubense) নামক এক প্রকার ছএাক দ্বারা হয়ে থাকে।
রোগের অনূকুল অবস্থা ঃ
(ক) পূর্বের ফসলে রোগ থাকলে বা রোগাক্রান্ত গাছ থেকে চারা সংগ্র করলে পরে বছর আবার হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
(খ) চারা রোপনের সময় বয়স কম হলে।
(গ) নিন্নমানের নিস্কাশিত মাটি হলে।
(ঘ) অধিক আগাছা ও ঘাস হলে।
(ঙ) আন্ত পরিচর্চার অভাব হলে এ রোগ হয়ে থাকে
লক্ষন সমুহ ঃ
(১) পুরাতন পাতায় হলুদ বর্ণের দাগ দেখা যায়।
(২) পুরাতন পাতা ক্রমানয়ে সমস্ত অংশ হলুদ হয়ে যায়। পাতার কিনারা ফেটে যায় ও বোটা ফেটে যায়। লিফব্লেট ( পাতা) ঝুলে পড়ে ও শুকে যায়।
(৩) দুই-তিন দিনের মধ্যে গাছের সমস্ত পাতা ঝুলে পড়ে (মধ্যের মাইজ বা হার্ট লিফ ছাড়া)।
(৪) কলাগাছের গোড়া মাটির লেভেলের কাছকাছি লম্বালম্বি ফেটে যায়।
(৫) আক্রান্ত গাছ থেকে অস্বাভাবিক থোড় বের হয়।
(৬) আক্রান্ত গাছ ও রাইজোম উহার ভিতর কালচ্ েবর্ণের দেখা যায়।
দমন ব্যবস্থা ঃ
(১) রোগমুক্ত মাঠ খেকে সাকার সংগ্রহ করতে হবে।
(২) মাঠ থেকে রোগান্ত গাছ সংগ্র করে পুড়ে ফেলতে হবে।
(৩) রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করতে হবে।
(৪) রোগের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার হয় এমন ফসল, যেমন ঃ বেগুন, টমেটো, ঢেড়স প্রভৃতির সাথে ফসল চাষ না করা।
(৫) ২-৩ বছর পর ফসল বদল করে শস্য পর্য়ায় অলম্বন করা।
(৬) চুন প্রয়োগ করে মাটির পি-এইচ বৃদ্বি করা।
(৭) ছাএাক নাশক প্রয়োগ করা। যেমন ঃ ফুরাডন ৫ জি প্রতি গাছে ৫ গ্রাম হারে (১.৫ কেজি/ একর) প্রয়োগ করতে হবে।
সিগাটোগা (Sigatoka)
এ রোগের কারণ হল সারকোসপোরা মুছি (Cercospora musae)নামক এক প্রকার ছএাক।
রোগের অনূকুল অবস্থা ঃ
(ক) পূর্বের ফসলে রোগ থাকলে পরে বছর আবার হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
(খ) গাছে বেশী পাতা হলে এবং মাটি থেকে প্রথম পাতার দুরত্ব কম হলে।
(গ) নিন্নমানের নিস্কাশিত মাটি হলে।
(ঘ) অধিক আগাছা ও ঘাস হলে এ রোগ হয়ে থাকে।
লক্ষণসমুহ ঃ
(১) সব চেয়ে নীচের পাতায় কিনারায় সমান্তরাল ভাবে হালকা-বাদামী থেকে হলুদ বর্নের দাগ দেখা যায় এবং দাগগুলি পানি ভেজা মনে হয়।
(২) দাগগুলি আকারে বৃদ্বি পায় এবং স্পিন্ডিল আকার ধারন করে, যার কেন্দ্রস্থল ধুসর থেকে বাদামী বর্ণের হয়।
(৩) রোগের অগ্রগতি অবস্থায় অনেকগুলি দাগ একএে বড় আকারে ক্ষত সৃষ্টি করে এবং পাতার কিনারা শুকাতে শুরু করে।
(৪) রোগ মারাক্তক আকার ধারন করলে গাছ ছোট ছোট সাকার উৎপাদন করে।
দমন পদ্বতি ঃ
(১) রোগ আক্রান্ত পাতা সংগ্র করে ধংস করতে হবে।
(২) বাগানের মাটি সুনিস্কাশিত রাখতে হবে।
(৩) যে সব শস্য রোগ বহন করে ( যেমন ঃ বেগুন, টমেটো প্রভৃতি) উহা অপসারন করা।
(৪) শস্য পর্যায় অবলম্বন করা।
(৫) মুড়ি ফসল চাষ না করা।
(৬) রোগ আক্রান্ত হলে ফসলে ছাএাক নাশক ¯েপ্র করতে হবে । যেমন ঃ টিলর্ট ০.২% হারে বর্ষার পূর্বে এক বার এবং পরে দুই বার ¯েপ্র করতে হবে।
কলার পাতা ও ফলের পোকা ঃ
ক্ষতির প্রকৃতি ঃ এ পোকা কলা চাষিরা মারাক্তক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে ( বিশেষ করে অমৃত সাগর কলাতে)। চারা অবস্থা থেকে ফল ধারণ পর্যন্ত এরা কলা গাছের ক্ষতি সাধন করে থাকে। কলার পাতা যখন ছোট থাকে তখন এরা পাতার অন্ঙীয় পৃষ্ট খেতে থাকে। পাতার সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে তাই বিষমকার জালিকা সৃষ্টি হয়। পাতার বৃদ্বির সাথে সাথে দাগসমুহ শুকে আসতে থাকে এবং গাছের বৃদ্বি ব্যহত হয়। কলা বের হওয়ার সময় এ পোকা মোচার মধ্যে ঢুকে কচি কলার খোসা খেতে থাকে, এতে কলা বড় হওয়ার পর দাগ স্পষ্ট হয়ে ওঠে এবং বাজার মুল্য কমে যায়।
প্রতিকার ঃ
(১) শস্য পর্যায় অবলম্বন করে পর পর দুই বছর কলা চাষ থেকে বিরত থাকতে হবে।
(২) নুতন কলা বাগানের পাশে মুড়ি কলাগাছ (পুরাতন কলা বাগান) রাখা যাবে না।
(৩) প্রতি লিটার পানিতে ১০ গ্রাম সেবিন-৮৫ ডব্লিউ পি ১৫ দিন পর পর দুই বার ¯েপ্র করতে হবে।
(৪) ডায়াজিনন ৬০ ইসি ( সেবিনের পরিবর্তে) ব্যবহার করা যেতে পারে ।
লেখক ঃ ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও আঞ্চলকি প্রধান, বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারটান), রাজশাহী বিভাগীয় আঞ্চলিক কেন্দ্র, সিরাজগঞ্জ।