নতুন জাতের বিইউ লাউ-২, লাউ ধরবে গিঁটে গিঁটে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছোট পরিবারের জন্য খাওয়ার উপযোগী ছোট আকারের স্মার্ট জাতের লাউ ‘বিইউ লাউ ২’ উদ্ভাবন করেছে।বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (গবেষণা) ড. এ. কে. এম. আমিনুল ইসলাম এ জাতটি উদ্ভাবন করেন।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ বোর্ড কর্তৃক সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে জাতটি অবমুক্ত হয়েছে।বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অধ্যাপক একেএম আমিনুল ইসলাম জানান, বাণিজ্যিক কৃষির বিষয়টি মাথায় রেখে সম্প্রতি ‘বিইউ লাউ ২’ নামে একটি লাউয়ের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। উচ্চ ফলনশীল এই জাতটির বিশেষত্ব হলো উন্মুক্ত পরাগায়িত অর্থাৎ এর বীজ থেকেই মাতৃগুণ সম্পন্ন লাউ গাছ উৎপন্ন হয়।
জাতটির ফলনের তুলনায় অঙ্গজ বৃদ্ধি খুব কম যা আধুনিক বা স্মার্ট কৃষির জন্য উপযোগী। তাছাড়াও পুং ও স্ত্রী ফুলের অনুপাত কম হওয়ায় গাছে খাদ্যের যে যোগান দেয়া হয় তা অত্যন্ত মিতব্যয়িতার সাথে ব্যবহার করে জাতটি অধিক ফলন দেয়।
জাতটির গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো, আগাম জাত হিসাবে জুলাই-আগস্ট মাস থেকেই এর বীজ বপন করা যায়। দেশীয় লাউয়ের ন্যায় এ জাতটি হালকা সবুজ বর্ণের, গোলাকার/উপবৃত্তাকার, গিঁটে গিঁটে ফল ধরে, ফলের গড় ওজন দেড় থেকে দুই কেজি। যা বর্তমান সমাজের ছোট পরিবারগুলোর চাহিদার সাথে মানানসই।
‘বিইউ লাউ ২’ জাতটি বিদেশি মাতা লাউয়ের সাথে দেশি পিতা লাউয়ের সংকরায়ন পরবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে উদ্ভাবন করা হয়েছে। লাউয়ের জাতটি উদ্ভাবনে ৬-৭ বছর সময় লেগেছে। এ জাতটি মাচা ছাড়া সমতল ভূমিতে খড়-কুটা বিছিয়ে দিলেও গাছ ভালভাবে বিস্তার লাভ করে এবং ভালো ফলন দেয়।
বীজ বপনের ৪০ দিনের মধ্যে লাউ ধরতে শুরু করে। এতে উৎপাদন বা চাষাবাদ খরচও কম পড়ে। একটি গাছ থেকে ১৫/২০টির মতো লাউ ধরে এবং তিন/চার মাস ফলন দেয়।
জাতটি সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য (ভিসি) অধ্যাপক মো. গিয়াস উদ্দিন মিয়া জানান, জাতটির অঙ্গজ বৃদ্ধি কম হওয়ায় স্বল্প জায়গায় এমনকি ছাদবাগানে সহজে চাষ করা সম্ভব। তাছাড়া ফল ছোট আকারের হওয়ায় একবেলার জন্য লাউ কেটে রান্না করে বাকিটা পরের বেলার জন্য রেখে দেয়ায় স্বাদ ও গুনাগুণ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
তিনি বলেন, জাতটি দেশের সবজির চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এর আগে এ বিজ্ঞানী ‘বিইউ লাউ ১’ এবং ‘বিইউ হাইব্রিড লাউ ১’ জাত উদ্ভাবন করেছেন। বিইউ লাউ ২ আগাম জাতের হওয়ায় কৃষকরা বিক্রি করে দাম বেশি পাবেন, লাভবান হবেন। টবে উৎপন্ন হওয়ায় এটি ছাদ কৃষিতেও বড় অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় একটি গবেষণাভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়। এ প্রতিষ্ঠান থেকে এ যাবৎ ৫০টির মতো বিভিন্ন শস্যজাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। সেগুলো কৃষকদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করেছে এবং দেশের কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সম্প্রতি দেশের খ্যাতনামা চারটি শস্যবীজ বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান তাদের সঙ্গে চুক্তি করেছে বলে জানান উপাচার্য।
তথ্যসূত্রঃ বিডি জার্নাল