





বিকৃত মানসিকতার মানুষ বা সাইকোপ্যাথের সাথে প্রেম? তা তো শুধু হরর সিনেমায় দেখা যায়! কিন্তু আসলেই কী তাই? আসলে কিন্তু প্রতি ১০০ জনের মাঝে একজন মানুষ সাইকোপ্যাথ হতে পারেন। তারমানে, আপনার ভালোবাসার মানুষটিও সাইকোপ্যাথ হওয়ার একটি সম্ভাব্যতা রয়েছে। বুঝবেন কী করে তিনি সাইকোপ্যাথ? চেহারা দেখে তো আর ভেতরটা বোঝা যায় না!
হরর সিনেমা দেখে আমাদের ধারনা হয়ে গেছে সাইকোপ্যাথ মানেই তার চেহারা ক্রূর, আচরণ রুক্ষ ও সে পেশায় খুনি। আসলে বেশিরভাগ সাইকোপ্যাথ আসলে সন্ত্রাসী নয়। বরং তারা সাধারণ মানুষের মতোই জীবনযাপন করেন। এ কারনে সাইকোপ্যাথ বোঝার উপায় কম। তবে কিছু গবেষণা রয়েছে এ বিষয়ে।
সাইকোপ্যাথদের শনাক্ত করা নিয়ে কিছু মতভেদ আছে। তবে সব বিশেষজ্ঞই স্বীকার করেন, সাইকোপ্যাথরা সমাজবিমুখী হয়, তাদের সহমর্মিতা, অনুশোচনা কম হয়, তারা মারমুখী স্বভাবের হয় ও হুটহাট সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের অবশ্য কিছু ভালো গুণও থাকে। যেমন তারা মানুষের ব্যাপারে ছোট ছোট বৈশিষ্ট্য খেয়াল করে ও কথোপকথনে সাবলীল হয়। তারা পেশাগত ক্ষেত্রেও সফল হয়।



সাইকোপ্যাথের সাথে প্রেম করতে গেলে সবার আগে যে বিষয়টিতে খটকা লাগবে তা হলো প্যাথোলজিক্যাল লাইং বা মিথ্যাচার। তারা সঙ্গীর সামনে ভালো সাজার সমূহ চেষ্টা করে ও তার উদ্দেশ্যে ঝুড়ি ঝুড়ি মিথা বলে থাকে। তবে তা ধরতে পারা সহজ নয় কারণ তারা অনেক সাজিয়ে গুছিয়ে মিথ্যা উপস্থাপন করে।
নিজেকে নিয়ে খুবই গর্ব বোধ করে সাইকোপ্যাথরা। সঙ্গীকে অনেক সময়েই ছোট করে দেখার প্রবণতা দেখা যায় তাদের মাঝে। এমনকি প্রেমিক বা প্রেমিকাকে নিয়ন্ত্রন করার উদ্দেশ্যে তার আত্মবিশ্বাস ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা চালাতে পারে সে। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘গ্যাসলাইটিং’। তারা সাধারণত এই কাজটি সহজে করতে পারে কারণ তারা প্রেমিক/প্রেমিকাকে খুব কাছে থেকে পর্যবেক্ষণ করে। সঙ্গীকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে প্রচণ্ড রাগারাগিও করে তারা। এমনকি নিজের ফায়দা ওঠাতে অনুনয়ের আশ্রয়ও নেয় তারা।



গবেষণা থেকে দেখা যায়, সাইকোপ্যাথদের মস্তিস্ক এমনই, যে তারা সহজে অনুশোচনায় ভোগে না। এতে মানসিকভাবে বেশি আহত হয় তার প্রেমিক বা প্রেমিকা। এমনকি, সে যত বড় সাইকোপ্যাথ, তার মাঝে সম্পরকে প্রতারণা করা ও প্রেমিক/প্রেমিকাকে লুকিয়ে অন্য সম্পর্কে জড়ানোর প্রবণতা বেশি হয়।
সাইকোপ্যাথরা অন্যের প্রতি সহমর্মিতা দেখাতে পারে না বললেই চলে। এ কারনেও তাদের সাথে সম্পর্কে থাকা খুবই যন্ত্রণাদায়ক। গবেষণায় দেখা যায়, তাদের মাঝে আসলে সহমর্মিতা আছে, কিন্তু তারা এই অনুভুতিটাকে এড়িয়ে চলে। এটাও দেখা যায়, তারা আসলে জানে তারা প্রেমিক/প্রেমিকাকে কষ্ট দিচ্ছে, তারপরেও কাজটি করে তারা। সাইকোপ্যাথদের মাঝে সোশিওপ্যাথি ও নার্সিসিজমের বৈশিষ্ট্যও দেখা যায়, এসব কারণেই তারা প্রেমে প্রতারণা করে অহরহ।



গবেষণায় দেখা যায়, সাইকোপ্যাথের সাথে প্রেম করতে গিয়ে পুরুষ ও নারী ভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। নারীরা সাইকোপ্যাথ প্রেমিকের আচরণে বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েন ও একটা সময় তাকে ছেড়ে চলে যান। অন্যদিকে পুরুষরা সাইকোপ্যাথ প্রেমিকার সাথে যত সময় কাটান, ততই ভয়ে থাকেন যে প্রেমিকা তাকে ছেড়ে চলে যাবে।
সাইকোপ্যাথের সাথে সম্পর্ক ছেদ করতে পারলে অনেকসময়েই দেখা যায় সে দুঃখিত হয়। কিন্তু সে দুঃখিত হয় শুধুমাত্র এই কারনে, যে প্রেমিক/প্রেমিকাকে নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ হারালো সে। এছাড়া তার সাথে সাধারণত সম্পর্কে ফিরে যাওয়ার চেষ্টাও ব্যর্থ হয়, কারণ তারা নিজের ঘাড়ে দোষ নিতে রাজি হয় না।মাঝে মাঝে নতুন ‘ভিকটিম’ খুঁজে না পেলে তারা প্রাক্তন প্রেমিক বা প্রেমিকার কাছে ফিরে আসে, কারণ সাইকোপ্যাথরা পরজীবী ধরণের জীবনযাপন করে। সে নিজে সঙ্গীর কোনো কাজে না আসলেও সঙ্গীর থেকে দাবি করে ষোলোআনা।
এ সব থেকে বোঝা যায় যে, সাইকোপ্যাথদের সাথে সম্পর্কে থাকাটা খুব সহজ নয়। এরপরেও অনেকে সাইকোপ্যাথদের নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলো মেনে নিয়েই তাদের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে থাকে।



আপনি কি সাইকোপ্যাথ? যে লক্ষণ দেখে বুঝবেন
বইটির নাম ‘দ্য বুলি’স ট্র্যাপ’। বইয়ে এন্ড্রূ এমন কিছু লক্ষণের কথা উল্লেখ করেছেন, যা দেখে সাইকোপ্যাথ চেনা সম্ভব।
১. এরা সাধারণত বিমর্ষ প্রকৃতির হয়। কাউকে সম্মান করার বদলে এরা তাদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করে। কাউকে সংশোধন করার বদলে তাকে নিঃশেষ করে দেওয়ার পক্ষে এরা।
২.সাইকোপ্যাথরা সবসময়ই নিজেকে ভালো বা সঠিক প্রমাণের মরিয়া চেষ্টা করে। মুখরোচক গল্প, অঙ্গভঙ্গি বা আপাত বিশ্বাসযোগ্য কোনো গল্প বা ঘটনা দিয়ে তাদেরকে সঠিক প্রমাণের চেষ্টা করে। তাদের সাবলীল মিথ্যা উপস্থাপনায় অনেকেই প্রাথমিকভাবে তাদেরকে সঠিক বলে মনে করতেও পারেন।
৩. সাইকোপ্যাথরা নিজেদেরকে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ভাবেন যে, তারা ভাবেন, কোনো নিয়মেই তাদের আবদ্ধ করা যাবে না। প্রচলিত আইনকে নিজেদের জন্য অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করে তারা। বরং তারা ভাবেন, অন্যের তৈরী আইনে কেন, আমি চলব আমার নিজের আইনে।



৪. ধারাবাহিকভাবে মিথ্যা বলা, একটি মিথ্যাকে ঢাকতে গিয়ে বারবার মিথ্যা বলা সাইকোপ্যাথের লক্ষন। ফাস তার বইয়ে এ লক্ষণের সাথে সাথে আরো যোগ করেছেন, বারবার মিথ্যা বললেও এদের মিথ্যা যে ধরা পড়ে যাচ্ছে, বা কেউ তাদের মিথ্যাটা ধরতে পারছে, সেটা তারা বোঝেনা।
৫. আত্নকেন্দ্রিকতা। সাইকোপ্যাথরা সবসময়ই নিজেকে নিয়ে ভাবে। চলাফেরা, আচরণ, জীবণ ধারণে অন্যের জন্য কোনো ছাড়সুলভ মনমানসিকতা দেখায়না তারা। নিজের যা ইচ্ছা তাই করে তারা। তার এ কাজে অন্যের ক্ষতি হচ্ছে কিনা, সেটা বিবেচনা করেনা সাইকোপাথরা।
৬. তিনটি ক্ষেত্রে এরা একেবারে অনন্য। কৌশলে কোনো কিছু পরিবর্তন করে ফেলা, কাউকে পথবিচ্যুত করা এবং প্রতারণা করা।



সাইকোপ্যাথ সহকর্মী চেনার ১৫ টি উপায়
“মানুষটা একটা সাইকোপ্যাথ”- বেশ প্রচলিত একটি বাক্য। কি এই সাইকোপ্যাথি বা কারা সাইকোপ্যাথ। কতটুকু জানি আমরা এ সম্পর্কে? সাইকোপ্যাথি বা সাইকোপ্যাথ কী?
সাইকোপ্যাথি হচ্ছে মনোবিজ্ঞানের জনপ্রিয় একটা রোগের নাম। সাইকোপ্যাথি হলো একটি মানসিক অসুস্থতা বা পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার যা বিভিন্ন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করলেই বোঝা সম্ভব। এই রোগের রোগীদের সাইকোপ্যাথ বলা হয়ে থাকে। সাইকোপ্যাথ নারী-পুরুষ উভয়ই হতে পারে। আমরা হুটহাট ছোটখাটো কিছু কর্মকান্ডেই একজন মানুষকে সাইকোপ্যাথ বলে আখ্যায়িত করি।
এই সাইকোপ্যাথ যদি আমাদের কর্মক্ষেত্রে সহকর্মী রূপে চলে আসে, তবে বলা যায় কর্মজীবনে বেশ বেগ পেতে হবে। কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের মধ্যে অনেক সাইকোপ্যাথ লুকিয়ে থাকে। এ ধরণের ব্যক্তিদের এড়িয়ে চলাই উত্তম। কিন্তু সাইকোপ্যাথদের এড়িয়ে চলতে গেলে, প্রথমত তাদের সনাক্ত করতে হবে। নিম্নের ১৫ টি উপায়েই আপনার সহকর্মী সাইকোপ্যাথ কিনা তা সনাক্ত করতে পারবেন। তবে জেনে নেওয়া যাক একজন সাইকোপ্যাথ সনাক্তকরণের ১৫ টি লক্ষণ।



১. ধ্বংসাত্মক মনোভাব: সাধারণত একজন কর্মীর কাছে তার বস হচ্ছেন ‘সাইকোপ্যাথ’। কারণ তিনি যথেষ্ট রুঢ় এবং কঠোর। তার মধ্যে রয়েছে ভুল ধরিয়ে দেওয়ার প্রবণতা। কিন্তু একজন সাইকোপ্যাথ সহকর্মী বা বস কখনো আপনাকে ভুল পথে যেতে বাঁধা দিবেন না বরং উৎসাহিত করবেন। তাছাড়া সাইকোপ্যাথ ব্যক্তির জন্য সম্মান বা গৌরব প্রয়োজনীয় নয়। সে চায় শাসন করতে। সে ভয় ভীতির মাধ্যমে কাজ হাসিল করিয়ে নেওয়াতে বিশ্বাসী। সে সবসময় চাইবে তাকে সবাই সম্মান নয় ভয় করুক।
সাইকোপ্যাথের বিষয়ে, কানাডার দুটি বৃহৎ সংস্থার জ্যেষ্ঠ নির্বাহী এবং The Bully’s Strap এর লেখক এন্ড্রু ফ্যাস বলেছেন, “আমি হাজার হাজার লোকের হয়ে নেতৃত্ব দিয়েছি, পরিচালনা করেছি হাজারো কার্যক্রম। আমি স্থায়ী ছিলাম কেননা আমি শ্রদ্ধাকে আপন করে নিয়েছিলাম, আমি এর মাধ্যমেই মানুষকে কাজে অনুপ্রাণিত করতে চেয়েছিলাম কারণ আমি চাই মানুষ উন্নতি করুক।”
২. মনোমুগ্ধকর ব্যক্তিত্বের অধিকারী: সাইকোপ্যাথেরা সবচেয়ে ভাল উপস্থাপক। যে কিনা আলাপে বেশ পটু আর গল্পের আসরে যার ভাণ্ডারে থাকে অফুরন্ত গল্প যা আসর জমানোর জন্য একাই যথেষ্ট।



মনোবিজ্ঞানী Robert D. Hare তার ‘Psychology Today’র একটি আর্টিকেলে বলেছেন, একজন সাইকোপ্যাথ হচ্ছেন সদালাপী ব্যক্তি, যার কাছে থাকে অসম্ভাব্য কিন্তু বিশ্বাসী কিছু গল্প যা তাকে সকলের কাছে পরিচিত ও আকর্ষণীয় গল্পকার করে গড়ে তোলে। তিনি তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আরো বলেছেন, একবার এক পুরুষ কয়েদীর সাক্ষাৎকার নিতে গেলে কয়েদী তাকে তার রূপের প্রশংসা করে বসেন। সাক্ষাৎকারের শেষ দিকে Hare অস্বাভাবিক ভাবে বেশ চমৎকার অনুভব করছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে Hare কয়েদীর মনোমুগ্ধকর ব্যক্তিত্বের প্রতি দুর্বলতাকে বোকামি বলেই আখ্যায়িত করেন।
৩. আত্মমূল্যায়ন: একজন সাইকোপ্যাথের কাছে তার একমাত্র প্রতিযোগী সে নিজে। নিজেকে সে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ মনে করে যেন বাকি মানুষ সবাই তার খেলার পুতুল সমতুল্য। সে নিজেকেই এই মহাবিশ্বের মূল আকর্ষণ বলে মনে করে বলে জানিয়েছেন Hare.
৪. আত্মবিশ্বাস হলো হাতিয়ার: আমরা সাধারণ মানুষেরা খুব সহজেই আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলি। কোনো বাক বিতন্ডায় পরাজয় স্বীকার করে ফেলি সহজেই। Dr. Willium Hirstein তার Psychology Today তে বলেছেন, একজন সাইকোপ্যাথ চেনার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো তাদের মাত্রাতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস। হেরে যাওয়া যেকোনো বিতর্কেও অবিশ্বাস্য ভাবে নিজেকে উপস্থাপন করে জিতে আসবে এরা। তাই মনে রাখতে হবে একজন সাইকোপ্যাথ সহকর্মী সর্বদা নিজের কৃতিত্ব প্রমাণ করতে চাইবে।



৫. একজন মিথ্যাবাদী: মিথ্যা বলা সাইকোপ্যাথদের জন্য অত্যন্ত সহজ ব্যাপার। শুধু তাই নয়, তাদের মিথ্যা হয় অত্যন্ত গোছানো এবং তথ্যবহুল। মিথ্যা শুরু করলে তারা থামে না বা থামতে আগ্রহী নয়। তাদের মিথ্যা প্রমাণ হওয়ার বা মিথ্যুক হিসেবে ধরা পড়ে যাওয়ার কোনো ভয় তাদের থাকে না। কেননা সেই পরিস্থিতিতে কিভাবে আত্মবিশ্বাসের সাথে মিথ্যা বলে সামাল দিতে হবে, একজন সাইকোপ্যাথের তা জানা আছে।
৬. নিয়মের নেই কোনো পরোয়া: যে সহকর্মী কোনো নিয়মকে পরোয়া না করেই তার কার্যক্রম চালাতে থাকে, বুঝতে হবে তার মধ্যে মানসিক অসুস্থতা বিদ্যমান। মনোবিজ্ঞানী Amy Morin বলেছেন, একজন সাইকোপ্যাথ এতটাই নির্মম হৃদয়ের অধিকারী ও আত্মকেন্দ্রিক যে, যেকোনো পরিস্থিতিকে তার ভয়ানক আচরণ দিয়েই সামাল দেওয়ার ক্ষমতা রাখে বলে সে বিশ্বাস করে।
৭. পরজীবীর ন্যায় জীবনধারা: পরজীবী যেমন নিজের জীবিকার জন্য কেবল বাহকের দেহ থেকে গ্রহণ করতে থাকে, ঠিক একইভাবে একজন সাইকোপ্যাথ নিজের জীবনে উন্নতির লক্ষ্যে যেকোনো কিছু গ্রহণে আগ্রহী। তারা এতটাই আত্মকেন্দ্রিক এবং নিজের প্রতি তাদের ভালবাসা এতই তীব্র যে, কারো অপকার করতে গিয়েও তাদের অনুশোচনা বোধ হয় না। তারা মনে করেন – তাদের জীবন তাদের মত চলবে এবং কোনোরূপ পরামর্শে তারা আগ্রহী নন। তাদের ধারণা জীবনের নিয়মিত নিয়মগুলো অনুসরণ করতে তারা বাধ্য নয়।



৮. তারা হন ধূর্ত: একজন সাইকোপ্যাথের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো, তারা হলো সুকৌশলী, ছলনাকারী ও পরিবর্তনশীল। এই তিনটির প্রভাবে তারা সর্বদা প্রথম স্থান দখল করতে পারেন। যে ব্যক্তি খুব সহজেই যেকোনো নির্ভুল কাজের কৃতিত্ব নিয়ে নেন কিন্তু তার ভুলের দায়ভার নিতে আগ্রহী নন বরং অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেন, তিনিই হলেন সাইকোপ্যাথ।
৯. অসুন্দর শৈশব: কথায় আছে, Rome wasn’t built in a day. অর্থাৎ একদিনেই রোম শহর তৈরী হয় নি। একজন সাইকোপ্যাথও একদিনেই সাইকোপ্যাথ হন নি। একজন মানসিক অসুস্থ রোগীর ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় তাদের শিশুকাল ছিলো বেশ জটিল প্রকৃতির। স্বাভাবিক ভাবে তারা বেড়ে ওঠে নি। শিশুকাল থেকেই বিভিন্ন অভ্যাস যেমন- মিথ্যা বলা, চুরি করা, প্রতারণা করা ইত্যাদি তাদের বড় হয়ে একজন প্রকৃত মানসিক রোগী হওয়ার ক্ষেত্রে বেশ প্রভাব ফেলেছে।
১০. আবেগের অভাব: সাধারণের মত সাইকোপ্যাথদের আবেগ থাকে না। শুধুমাত্র লোক দেখানো আবেগে তারা পারদর্শী। আর অনুভূতির ক্ষেত্রে তারা নিজের দিক বাদে অন্য কোনো ব্যক্তির প্রতি তেমন কোনো আবেগ অনুভব করেন না।
১১. দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যে অবিশ্বাসী: সাইকোপ্যাথ যতই চেষ্টা করুক বা ধূর্ততার সাথে চলুক, লক্ষ্য অর্জনের তাদের বেশ বেগ পেতে হয়। কারণ তারা পরিকল্পনায় পারদর্শী নন। শুধুমাত্র সাময়িক চিন্তা করেই তারা পথ চলতে শুরু করেন। দীর্ঘমেয়াদী চিন্তা করাতে তাদের বেশ অনাগ্রহ।



১২. অনুশোচনার অভাব: অনুশোচনার কোনো স্থান নেই একজন সাইকোপ্যাথের জীবনে। তার যেকোনো কর্মকান্ড যদি কারো ক্ষতি করে, সে বিভিন্ন যুক্তি তর্কের মাধ্যমে নিজের স্থান সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারে। নিজের পরিবার পরিজন বা বন্ধু-বান্ধবের সংখ্যা কম হলেও, যারা রয়েছে তাদেরকে দুঃখ দিয়ে নিজের কাজ হাসিল করতেও একজন সাইকোপ্যাথ অনুশোচনা বোধ করে না।
Robert D. Hare তার আরেকজন কয়েদীর সাক্ষাৎকারের কথা বলেছেন, যেখানে কয়েদী, একজনকে ছুরিকাঘাত করে জেলে আছে। তাকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সে উত্তরে বলে,”কয়েক মাস হাসপাতালে থেকেই তার মুক্তি আর আমি পচে মরছি এখানে।”
কয়েদী তখনো নিজের কর্মকান্ডে অনুশোচনা বোধ না করে আহতের হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়া নিয়ে দুঃখ করছিল।



১৩.বদমেজাজী: বদমেজাজী মানুষের সংখ্যা আমাদের চারপাশটায় কিন্তু কম নয়। কিন্তু খোশমেজাজ থেকে খুব দ্রুত বদমেজাজে চলে যাওয়া মানুষের সংখ্যা হাতে গোনা। একজন সাইকোপ্যাথ সহকর্মী যেমন তার উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে মন জয় করে নিবে, ঠিক একই ভাবে খুব সহজে সামান্য বিষয়েই মেজাজ বিগড়ে যাবে তার।
১৪. প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে চান না: স্বাভাবিক ভাবেই প্রতারক ও ধূর্ত প্রকৃতির মানুষ কখনোই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে চান না। এটা হতে পারে তার ভালবাসার সম্পর্কের ক্ষেত্রে। যদি আপনার কোনো সহকর্মী তার ‘প্রেম’ নিয়ে বেশ বিরক্ত থাকেন তবে কিন্তু সরাসরই তাকে সাইকোপ্যাথ আখ্যায়িত করা যায় না। প্রতিজ্ঞাবদ্ধতায় ভীতি বাকি লক্ষণগুলোর পাশাপাশি থাকতে পারে।
১৫. কাজের প্রতি বিরক্ত প্রকাশ: আপনার সহকর্মী যদি ক্রমাগত কাজের ব্যাপারে বিরক্ত প্রকাশ করে, তবে হতে পারে আপনার কর্মক্ষেত্র বেশ একঘেয়ে কিংবা আপনার সহকর্মী ভীষণ একঘেয়ে।
কিন্তু উপরিউক্ত সকল লক্ষণের উপস্থিতির সাথে যদি সহকর্মীর মধ্যে কাজের প্রতি অনুৎসাহের ভাব প্রকাশ পায়, তবে তাকে সাইকোপ্যাথ হিসেবে আখ্যায়িত করাই যায়।
উপরিউক্ত লক্ষণগুলো একজন সাইকোপ্যাথের প্রকাশক। কিন্তু নির্ভুল ভাবে একজন মনোবিজ্ঞানীই কেবল এই রোগ নির্ণয় করতে পারেন।





